আবু বকর (রা) এর যুগ (৬৩২–৬৩৪)
আরব উপদ্বীপ বিজয়ঃ
মুহাম্মাদ (সা.) এর মৃত্যুর পর অনেক আরব গোত্র ইসলাম ত্যাগ করে এবং বিদ্রোহ ঘোষণা করে। খলিফা আবু বকর (রাঃ) এসকল ইসলামত্যাগী ও বিদ্রোহীদের দমনের জন্য সেনাবাহিনী প্রেরণ করেন। খালিদ (রাঃ) এসময় আবু বকর (রাঃ) এর উপদেষ্টা ছিলেন। রিদ্দার যুদ্ধের কৌশলগত পরিকল্পনা প্রণয়নকারীদের মধ্যে তিনি অন্যতম ছিলেন। মুসলিম সেনাবাহিনীর শক্তিশালী অংশের নেতৃত্ব তাকে প্রদান করা হয়। তাকে মধ্য আরবে অভিযানে পাঠানো হয়েছিল। এটি ছিল কৌশলগত দিক থেকে সবচেয়ে স্পর্শকাতর অঞ্চল এবং শক্তিশালী বিদ্রোহীরা এখানে অবস্থান করছিল। এই অঞ্চল মদিনার কাছে ছিল তাই শহরের জন্যও হুমকি বিবেচিত হয়েছিল। খালিদ (রাঃ) প্রথমে তায়ি ও জালিদার বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে অগ্রসর হন। সাহাবি ও তায়ি গোত্রের একজন প্রধান আদি ইবনে হাতিম এখানে মধ্যস্থতা করেন। ফলে এই গোত্র খিলাফতের কর্তৃত্ব মেনে নেয়।
৬৩২ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যভাগে খালিদ (রাঃ) বুজাখার যুদ্ধে তুলাইহাকে পরাজিত করেন।তুলাইহা নিজেকে নবি দাবি করেছিলো এবং বিদ্রোহীদের একজন প্রধান নেতা ছিলেন। গামরার যুদ্ধে তার অনুসারীরা পরাজিত হওয়ার পর তুলাইহার শক্তি খর্ব হয়।এরপর খালিদ (রাঃ) নাকরার দিকে অগ্রসর হন এবং নাকরার যুদ্ধে বনু সালিম গোত্রকে পরাজিত করেন। ৬৩২ সালের অক্টোবরে জাফরের যুদ্ধে গোত্রীয় নেত্রী সালমার পরাজয়ের পর এই অঞ্চল নিয়ন্ত্রণে আসে।
মদিনার পার্শ্ববর্তী অঞ্চল সুরক্ষিত হওয়ার পর খালিদ (রাঃ) নজদের দিকে অগ্রসর হন। এখানে বনু তামিম গোত্রের শক্তঘাটি ছিল। এই গোত্র খিলাফতের কর্তৃত্ব মেনে নেয়। অনেক গোত্র খালিদের মুখোমুখী হতে এবং খিলাফতের কর্তৃত্ব মেনে সহজে মেনে নেয় নি। কিন্তু বনু ইয়ারবু গোত্র ভিন্ন সিদ্ধান্ত নেয়। গোত্রের শেখ মালিক ইবনে নুয়াইরা খালিদের বাহিনীর সাথে সরাসরি সংঘর্ষে যায় নি। তিনি নিজ অনুসারীদের বিভিন্ন দলে ভাগ হওয়ার নির্দেশ দেন এবং নিজ পরিবারসহ মরুভূমির দিকে চলে যান।তিনি কর সংগ্রহ করে মদিনায় প্রেরণ করেন। তবে মালিককে বিদ্রোহের দায়ে অভিযুক্ত করা হয়েছিল এবং স্বঘোষিত নবী দাবী করা সাজ্জাহর মিত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল। মালিককে তার গোত্রের সদস্যদের সাথে গ্রেপ্তার করা হয়। খালিদ (রাঃ) তাকে তার অপরাধ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। মালিক এসময় “আপনার নেতা এটা বলেছেন, আপনার নেতা সেটা বলেছেন” এভাবে উত্তর দেন। নেতা দ্বারা আবু বকর (রাঃ) কে বোঝানো হয়েছিল। উত্তরের ধরন শুনে খালিদ (রাঃ) তাকে ইসলামত্যাগী ঘোষণা করে তার মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ দেন।
সাহাবি আবু কাতাদা আনসারী (রাঃ) মদিনা থেকেই খালিদ (রাঃ) এর সঙ্গী ছিলেন। মালিকের মৃত্যুদণ্ডের সংবাদে তিনি ব্যথিত হন এবং মদিনায় গিয়ে আবু বকর (রাঃ) এর কাছে অভিযোগ করে বলেন যে একজন মুসলিমের হত্যাকারীর অধীনে তিনি কাজ করবেন না।মালিকের মৃত্যু এবং খালিদ (রাঃ) কর্তৃক মালিকের স্ত্রী লায়লাকে গ্রহণের ফলে বিতর্ক তৈরি হয়। আবু বকর (রাঃ) ঘটনা ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য খালিদ (রাঃ) কে মদিনায় তলব করেন। খালিদ (রাঃ) মালিককে ইসলামত্যাগী ঘোষণা করলেও উমর (রাঃ) তাতে সন্তুষ্ট হননি।
খালিদ (রাঃ) এরপর সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ ও স্বঘোষিত নবী মুসাইলিমাকে উৎখাত করেন। ৬৩২ সালের ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে ইয়ামামার যুদ্ধে খালিদ মুসাইলিমার বিরুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করেন। মুসাইলিমা যুদ্ধে নিহত হন।
পারস্য সাম্রাজ্যে অভিযানঃ
বিদ্রোহ দমনের পর সমগ্র আরব উপদ্বীপ খিলাফতের অধীনে ঐক্যবদ্ধ হয়। এরপর আবু বকর খিলাফতের সীমানা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেন। খালিদকে ১৮,০০০ সৈনিকসহ পারস্য সাম্রাজ্যে প্রেরণ করা হয়। তাকে পারস্য সাম্রাজ্যের সবচেয়ে সম্পদশালী অঞ্চল তথা নিম্ন মেসোপটেমিয়ার ইউফ্রেটিস অঞ্চল (বর্তমান ইরাক ) জয়ের জন্য পাঠানো হয়। খালিদ তার বাহিনী নিয়ে নিম্ন মেসোপটেমিয়া প্রবেশ করেন।যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বে খালিদ প্রতিপক্ষকে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়ে চিঠি লেখেন :
ধারাবাহিক চারটি যুদ্ধে খালিদ দ্রুত বিজয় অর্জন করেন। এগুলো হল শেকলের যুদ্ধে (এপ্রিল ৬৩৩), নদীর যুদ্ধ (তৃতীয় সপ্তাহ, এপ্রিল ৬৩৩), ওয়ালাজার যুদ্ধ (মে ৬৩৩) এবং উলাইসের যুদ্ধ (মধ্য মে ৬৩৩)। ৬৩৩ সালের মে মাসের শেষ সপ্তাহে নিম্ন মেসোপটেমিয়ার আঞ্চলিক রাজধানী আল-হিরার পতন ঘটে। অধিবাসীরা জিজিয়া প্রদান করতে রাজি হয় এবং মুসলিমদের সহায়তা দিতে সম্মত হয়। ৬৩৩ সালের জুনে খালিদ (রাঃ) আনবার অবরোধ করেন। ৬৩৩ সালে আনবারের যুদ্ধের পর শহর আত্মসমর্পণ করে। খালিদ (রাঃ) এরপর দক্ষিণ দিকে অগ্রসর হন এবং জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে আইনুল তামির জয় করেন।
এসময় নাগাদ প্রায় সমগ্র নিম্ন মেসোপটেমিয়া (উত্তরাঞ্চলীয় ইউফ্রেটিস অঞ্চল) খালিদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। ইতিমধ্যে খালিদ (রাঃ) উত্তর আরবের দাওমাতুল জান্দালে সহায়তার জন্য বার্তা পান। এখানে আরেক মুসলিম সেনাপতি আয়াজ বিন গানাম প্রতিপক্ষ কর্তৃক বেষ্টিত হয়ে পড়েছিলেন। ৬৩৩ সালের আগস্টে খালিদ (রাঃ) দাওমাতুল জান্দালে পৌঁছান এবং দাওমাতুল জান্দালের যুদ্ধে প্রতিপক্ষকে পরাজিত করেন। শহরের দুর্গও অধিকার করা হয়।
আরব থেকে ফেরার পর খালিদ (রাঃ) পারস্যের সেনাবাহিনী ও তাদের মিত্র আরব খ্রিস্টানদের সেনা সমাবেশের খবর পান। এসব বাহিনী ইউফ্রেটিস অঞ্চলের চারটি ভিন্ন ক্যাম্পে ঘাটি করেছিল। এগুলো হল হানাফিজ, জুমাইল, সানিই, এবং মুজাইয়া। শেষোক্তটি সর্ববৃহৎ ছিল। খালিদ (রাঃ) তাদের সম্মিলিত বাহিনীর সাথে লড়াই না করে বরং তিনদিক থেকে পৃথক রাত্রিকালীন আক্রমণের মাধ্যমে তাদের ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি তার বাহিনীকে তিনভাগে ভাগ করেন এবং রাতের বেলা সমন্বিত আক্রমণ চালানো হয়। এর মাধ্যমে ৬৩৩ সালের নভেম্বরে মুজাইয়ার যুদ্ধ, এরপর সানিইর যুদ্ধ এবং জুমাইলের যুদ্ধ সংঘটিত হয়।
মুসলিমদের এসকল বিজয়ের ফলে নিম্ন মেসোপটেমিয়া জয়ের জন্য পার্সিয়ানদের প্রচেষ্টা হ্রাস পায় এবং পার্সিয়ান রাজধানী তিসফুন অরক্ষিত হয়ে পড়ে। রাজধানীর উপর হামলা চালানোর পূর্বে খালিদ (রাঃ) দক্ষিণ ও পশ্চিমের সকল পার্সিয়ান শক্তিকে উৎখাতের সিদ্ধান্ত নেন। এরপর সীমান্ত শহর ফিরাজের দিকে অগ্রসর হন সাসানীয়, বাইজেন্টাইন ও খ্রিষ্টান আরবদের সম্মিলিত বাহিনীকে পরাজিত করেন। ৬৩৩ সালের ডিসেম্বরে সংঘটিত ফিরাজের যুদ্ধে শহরের দুর্গ অধিকার করা হয়। তার নিম্ন মেসোপটেমিয়া জয়ের অভিযানে এটা ছিল শেষ যুদ্ধ। এরপর কাদিসিয়ার দিকে অগ্রসর হওয়ার সময় তিনি আবু বকর (রাঃ) এর নির্দেশ সংবলিত চিঠি পান। চিঠিতে তাকে সিরিয়ায় গিয়ে মুসলিমদের কমান্ড গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়। ইরাকে অবস্থানকালীন সময়ে খালিদ (রাঃ) বিজিত অঞ্চলের সামরিক গভর্নর হিসেবেও দায়িত্বপালন করেছেন।
বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যে অভিযানঃ
সাসানীয়দের বিরুদ্ধে সফল অভিযানের পর খলিফা আবু বকর (রাঃ) খালিদ (রাঃ) কে রোমান সিরিয়ায় প্রেরণ করেন। চারটি সেনাদলের মাধ্যমে অভিযান চালানো হয়। এদের পৃথক লক্ষ্যবস্তু ছিল। বাইজেন্টাইনরা বিভিন্ন ঘাঁটি থেকে তাদের ইউনিটগুলি আজনাদয়ানে একত্রিত করে। এই পদক্ষেপের ফলে মুসলিম সেনারা সীমান্ত অঞ্চলে আটকা পড়ে এবং তাদের পেছনে এই বৃহৎ বাহিনী গ্রহণ করায় মুসলিম বাহিনীর পক্ষে মধ্য বা উত্তর সিরিয়ায় যাওয়া সম্ভব ছিল না। বাইজেন্টাইনদের তুলনায় মুসলিমদের সেনা সংখ্যা অপ্রতুল ছিল। সিরিয়ান রণাঙ্গনের মুসলিম প্রধান সেনাপতি আবু উবাইদা ইরনুল জাররাহ (রাঃ) খলিফা আবু বকর (রাঃ) এর কাছে সহায়তা চেয়ে বার্তা পাঠান। এরপর আবু বকর (রাঃ) খালিদ(রাঃ) এর নেতৃত্বে অতিরিক্ত সৈনিক প্রেরণ করেন।
ইরাক থেকে সিরিয়া যাওয়ার দুইটি পথ ছিল। একটি দাওমাতুল জান্দালের মধ্য দিয়ে এবং অন্যটি মেসোপটেমিয়া হয়ে আর-রাকার মধ্য দিয়ে। দাওমাতুল জান্দালের পথ দীর্ঘ ছিল এবং এই পথে কয়েক সপ্তাহ লেগে যেত। সিরিয়ায় মুসলিমদের তাৎক্ষণিক সহায়তা প্রয়োজন ছিল বিধায় খালিদ (রাঃ) এই পথ পরিহার করেন। উত্তর সিরিয়া ও মেসোপটেমিয়ায় রোমান ঘাটির কারণে তিনি মেসোপটেমিয়ার পথও এড়িয়ে যান।এসবের পরিবর্তে সিরিয়ান মরুভূমির মধ্য দিয়ে একটি অপ্রচলিত পথকে বেছে নেন। তিনি মরুভূমির মধ্য দিয়ে নিজ বাহিনীকে এগিয়ে নিয়ে যান। কথিত আছে যে পূর্ব নির্ধারিত একটি মরূদ্যানের পানির উৎসে পৌছানোর পূর্ব পর্যন্ত দুই দিন যাবত তার সৈনিকরা এক ফোটা পানিও পান করেনি। খালিদ একটি বেদুইন প্রক্রিয়ায় পানীয় জলের স্বল্পতা দূর করেছিলেন বলে জানা যায়। দীর্ঘ বিরতি দিয়ে সেনাবাহিনীর উটগুলিকে পানি পান করতে দেয়া হয় যাতে উট একবারে বেশি পানি পান করে। উটের পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকায় প্রয়োজনের মুহূর্তে উট জবাই করে পানি সংগ্রহ করা সম্ভব ছিল। এই ব্যবস্থা কার্যকর প্রমাণিত হয়।
৬৩৪ সালের জুন মাসে খালিদ (রাঃ) সিরিয়ায় প্রবেশ করেন। শীঘ্রই তিনি সীমান্তের সাওয়া, আরাক, পালমিরা, সুখনা, কারিয়াতাইন ও হাওয়ারিনের দুর্গ দখল করে নেন। শেষের দুইটি দুর্গ কারতিনের যুদ্ধ ও হাওয়ারিনের যুদ্ধের পর অধিকৃত হয়। এসকল দুর্গের নিয়ন্ত্রণ লাভের পর খালিদ (রাঃ) এর বাহিনী সিরিয়া-আরব সীমান্তের বুসরা শহরের দিকে অগ্রসর হন। এই শহর ছিল বাইজেন্টাইনদের মিত্র গাসানি আরব খ্রিষ্টান রাজ্যের রাজধানী। উকাব গিরিপথ অতিক্রমের মাধ্যমে তিনি দামেস্ক এড়িয়ে যান। মারাজ-আল-রাহাতে খালিদ (রাঃ) গাসানি বাহিনীকে পরাজিত করেন।
খালিদ (রাঃ) এর আসার খবর পেয়ে আবু উবাইদা চারটি সেনাদলের কমান্ডারদের অন্যতম শুরাহবিল ইবনে হাসানকে বুসরা আক্রমণের নির্দেশ দেন। শুরাহবিল তার ৪,০০০ সৈনিক নিয়ে বুসরা অবরোধ করেন। বাইজেন্টাইনদের সেনাসংখ্যা শুরাহবিলের চেয়ে অনেক বেশি ছিল। তারা মুসলিমদের উপর আক্রমণ করে প্রায় পর্যুদস্ত করে ফেলেছিল। এসময় খালিদের অশ্বারোহীরা উপস্থিত হয় এবং বাইজেন্টাইনদের উপর আক্রমণ করে।বাইজেন্টাইনরা নগর দুর্গে আশ্রয় নেয়। আবু উবাইদাহ (রাঃ) বুসরায় এসে খালিদ (রাঃ) এর সাথে যোগ দেন এবং খলিফার নির্দেশ মোতাবেক খালিদ (রাঃ) সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ কর্তৃত্ব গ্রহণ করেন। ৬৩৪ সালের জুলাই মাসের মধ্যভাগে বুসরার দুর্গ আত্মসমর্পণ করে। বুসরা অধিকার করার পর খালিদ (রাঃ) সকল মুসলিম সেনাদলকে আজনাদায়নে তার সাথে যোগ দিতে বলেন। ৩০ জুলাই এখানে সংঘটিত আজনাদায়নের যুদ্ধে বাইজেন্টাইনরা পরাজিত হয়। আধুনিক ইতিহাসবিদদের মতে সিরিয়ায় বাইজেন্টাইনদের ক্ষমতা চূর্ণ করার ক্ষেত্রে এই যুদ্ধের ফলাফল চাবিকাঠি ছিল।
এই যুদ্ধে জয়ের ফলে সিরিয়া অনেকটাই মুসলিমদের হাতে এসে পড়ে। খালিদ (রাঃ) বাইজেন্টাইনদের শক্ত ঘাটি দামেস্ক দখলের সিদ্ধান্ত নেন। এখানে বাইজেন্টাইন সম্রাট হেরাক্লিয়াসের জামাতা থমাস শহরের প্রতিরক্ষার দায়িত্বে ছিলেন। খালিদ (রাঃ) অগ্রযাত্রার খবর পেয়ে তিনি শহরের প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা করেন। এসময় হেরাক্লিয়াস এমেসায় ছিলেন। থমাস তার কাছে অতিরিক্ত সৈনিক চেয়ে চিঠি পাঠান। এছাড়াও খালিদ (রাঃ) এর অগ্রযাত্রার গতি হ্রাস এবং আসন্ন অবরোধের প্রস্তুতির জন্য থমাস নিজ বাহিনীকে প্রেরণ করেছিলেন। তার দুইটি সেনাদলের প্রথমটি আগস্টের মধ্যভাগে ইয়াকুসায় এবং দ্বিতীয়টি ১৯ আগস্ট মারাজ আস-সাফফারে ধ্বংস হয়। ইতিমধ্যে হেরাক্লিয়াসের কয়েকটি সেনাদলের পূর্বে প্রেরিত সহায়তা এসে পৌছায়। দামেস্ককে বাকি অঞ্চল থেকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য খালিদ (রাঃ) দক্ষিণে ফিলিস্তিনের রুটে, উত্তরে দামেস্ক-এমেসা রুটে এবং দামেস্কের দিকের রুটসমূহে কিছু সেনাদল প্রেরণ করেন। হেরাক্লিয়াসের প্রেরিত সেনাদলগুলিকে দামেস্ক থেকে ৩০ কিমি দূরে সানিতা-আল-উকাবের যুদ্ধে খালিদ (রাঃ) বিতাড়িত করেন।
৩০ দিন অবরোধের পর ৬৩৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর খালিদ দামেস্ক জয় করেন। দামেস্কের পতনের খবর পেয়ে সম্রাট হেরাক্লিয়াস এমেসা থেকে এন্টিওকের দিকে রওয়ানা হন। খালিদ (রাঃ) এর অশ্বারোহী বাহিনী অজ্ঞাত এক পথের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়ে দামেস্ক থেকে ১৫০ কিমি উত্তরে এন্টিওকের দিকে রওয়ানা হওয়া দামেস্কের বাইজেন্টাইন গেরিসনের উপর আক্রমণ করে। দামেস্ক অবরোধের সময় আবু বকর (রাঃ) মৃত্যুবরণ করেন। এরপর উমর (রাঃ) নতুন খলিফা হন। উমর (রাঃ) খালিদকে পদচ্যুত করে আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ (রাঃ) কে সিরিয়ায় মুসলিম বাহিনীর কমান্ডার নিয়োগ দেন। অবরোধ চলাকালীন সময়ে আবু উবাইদা (রাঃ) তার নিয়োগ ও খালিদ (রাঃ) এর পদচ্যুতির চিঠি পেয়েছিলেন কিন্তু শহর জয় করার পূর্ব পর্যন্ত তিনি খবর জানানো থেকে বিরত ছিলেন।
সূত্রঃ উইকিপিডিয়া
আরও তথ্যের জন্য দেখুন:
খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ)।পর্ব- ২
খালিদ ইবনুল ওয়ালিদ (রাঃ)। পর্ব-১
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন