সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

খালিদ ইবনুল ওয়ালিদ (রাঃ)। পর্ব-১

 আবু সুলাইমান খালিদ ইবনুল ওয়ালিদ ইবনে আল-মুগিরা আল-মাখজুমি  (৫৮৫ খ্রীঃ–৬৪২ খ্রীঃ) ছিলেন মুহাম্মাদ (সা.) এর একজন সাহাবি। তিনি তার উপাধি সাইফুল্লাহ আল-মাসলুল দ্বারাও পরিচিত। মুহাম্মাদ (সা.) এবং তার উত্তরসূরি খলিফা আবু বকর (রাঃ)  উমর (রাঃ) এর অধীনে সামরিক নেতৃত্বদান এবং নিজস্ব রণকৌশলের জন্য তিনি খ্যাত।খিলাফতের সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে থাকাবস্থায় খালিদ একশটিরও বেশি যুদ্ধে বিজয়ী হয়েছেন। এসকল যুদ্ধ বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য, সাসনীয় সাম্রাজ্য, সাসনীয় সাম্রাজ্য, তাদের মিত্র এবং অন্যান্য আরব গোত্রসমূহের বিরুদ্ধে সংঘটিত হয়েছে। তার কৌশলগত অর্জনের মধ্যে রয়েছে রিদ্দার যুদ্ধের সময় আরব উপদ্বীপকে ঐক্যবদ্ধকরণ এবং ৬৩২ থেকে ৬৩৬ সালের মধ্যে পার্সিয়ান মেসোপটেমিয়া এবং রোমান সিরিয়া বিজয়। ইয়ামামা, উলাইস, ফিরোজে তার ফলাফল নির্ধারণী বিজয় এবং ওয়ালাজা ও ইয়া্রমুকে তার কৌশলগত সাফল্যের জন্যও তাকে স্মরণ করা হয়।


মক্কার কুরাইশ বংশের বনু মাখজুম গোত্রে খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ) এর  জন্ম হয়। উহুদের ‍যুদ্ধে মুসলিমদের বিরুদ্ধে মক্কার জয়ে তিনি ভূমিকা রেখেছেন। হুদাইবিয়ার সন্ধির পর তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন এবং মদিনায় হিজরত করেন।মুতার যুদ্ধসহ বেশ কিছু যুদ্ধে তিনি অংশগ্রহণ করেছিলেন। রোমানদের বিপক্ষে এটি মুসলিমদের প্রথম লড়াই ছিল। এই যুদ্ধের তীব্রতা এত বেশি ছিল যে খালিদের নয়টি তলোয়ার ভেঙে গিয়েছিল। যুদ্ধে সেনাপতি জায়িদ ইবনে হারেসা, জাফর ইবনে হারেসা, জাফর ইবনে আবি তালিব ও আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা ক্রমান্বয়ে নিহত হওয়ার পর খালিদ সেনাপতি হিসেবে ভার নিয়েছিলেন। মুহাম্মাদ (সাঃ) এর মৃত্যুর পর বিদ্রোহী ও ইসলামত্যাগী আরবদের বিরুদ্ধে রিদ্দার যুদ্ধে তিনি মুসলিমদের নেতৃত্ব দিয়েছেন। সাসানীয় আরব মিত্ররাজ্য আল-হিরা তিনি জয় করেছিলেন। ইরাক (মেসোপটেমিয়া) জয়ের সময় তিনি সাসানীয় পার্সিয়ান বাহিনীকে পরাজিত করেছেন। পরে রোমান সিরিয়া এবং বাইজেন্টাইনদের আরব মিত্ররাজ্য গাসানিদের জয় করার জন্য তাকে পশ্চিম রণাঙ্গনে পাঠানো হয়।

উমর (রাঃ) খলিফা হওয়ার পর খালিদকে সেনাপতির পদ থেকে অপসারণ করেন। তবে এরপরও খালিদ আরব-বাইজেন্টাইন যুদ্ধের প্রথম পর্যায়ে একজন কার্যকর নেতা হিসেবে ভূমিকা রেখেছেন। তার নেতৃত্বে মুসলিমরা ৬৩৪ সালে দামেস্ক জয় করে। ৬৩৬ সালে ইয়ারমুকের যুদ্ধে মুসলিমরা গুরুত্বপূর্ণ বিজয় অর্জন করে। এর ফলে বিলাদ আল-শাম (লেভান্ট) জয়ের পথ উন্মুক্ত হয়ে যায়। ৬৩৮ সালে খালিদ তার সামরিক দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পান।

মূল যুদ্ধ, ক্ষুদ্র খণ্ডযুদ্ধ, একক দ্বন্দ্বযুদ্ধসহ একশটিরও বেশি যুদ্ধে খালিদ বিন ওয়ালিদ লড়াই করেছেন বলে জানা যায়। আজীবন তিনি অপরাজেয় যোদ্ধা ছিলেন। একারণে তাকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম সেনাপতিদের অন্যতম বলা হয়।


সাহাবীদের ইতিহাস

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আস্তাগফিরুল্লাহ! বলার ফজিলত নিয়ে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহঃ) এর চমৎকার গল্প অবলম্বনে।

হোম   আল-কুরআন   আল-হাদিস   সংবাদপত্র   চাকরি   পরীক্ষার রেজাল্ট   সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আলহামদুলিল্লাহ!  শুরুতেই বলে রাখি, ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহঃ) ছিলেন ইমাম বুখারী (রহঃ) এর ওস্তাদ। তিনি ১০ লক্ষ হাদিস মুখস্ত রেখেছিলেন। তিনি যে হাদিস গ্রন্থ লিখেছিলেন তার নাম মুসনাদে আহমদ। সেখানে তিনি প্রায় ৪০ হাজার হাদিস লিপিবদ্ধ করেছিলেন। একদিনের_ঘটনা!  ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহঃ) বৃদ্ধ মানুষটি হতভম্ব হয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলেন মসজিদের সামনে! এত রাতে কোন মানুষজনের ঘরে গিয়ে তাঁদের কষ্টের কারণ হতে চান নি তিনি। সেকারণেই চেয়েছিলেন মসজিদেই কাটিয়ে দিবেন রাতটুকু। নফল ছালাত আর কিছুটা ঘুমিয়ে দিব্যি রাত কাটিয়ে দেয়া যেত। কিন্তু বাধ সাধলেন মসজিদের খাদেম। কোন এক অজানা কারণে তাঁকে পছন্দ করলেন না খাদেম। স্রেফ মানা করে দিলেন খাদেম– মসজিদে রাত কাটানো যাবে না। মসজিদের সামনে দাঁড়িয়ে খাদেম সাহেব সেই কথাটি-ই বেশ উঁচু গলায় কথা বলে দিলেন বৃদ্ধকে। মসজিদ সাথে লাগানো রুটির দোকানে মধ্য বয়স্ক একজন বিশাল তন্দুরে রুটি বানাচ্ছেন। খাদেমের চড়া গলা তাঁর কানে পর্যন্ত গেল। রুটি বান...

খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ)।পর্ব- ৪

  উমর (রাঃ) এর যুগ (৬৩৪–৬৪২) খালিদ (রাঃ) এর পদচ্যুতিঃ ৬৩৪ সালের ২২ আগস্ট আবু বকর মৃত্যুবরণ করেন। তিনি উমর (রাঃ) কে নিজের উত্তরসূরি নিয়োগ দিয়ে গিয়েছিলেন। খলিফা হওয়ার পর উমর খালিদকে পদচ্যুত করে আবু উবাইদা (রাঃ) কে সেনাপতি নিয়োগ করেন। খালিদ (রাঃ) অপরাজেয় হওয়ায় অনেক মুসলিম তার কারণে যুদ্ধে বিজয় অর্জিত হচ্ছে বলে বিশ্বাস করতে শুরু করে। এই ব্যাপারে উমর (রাঃ) বলেছিলেন :"আমি খালিদ বিন ওয়ালিদকে আমার ক্রোধ বা তার দায়িত্বহীনতার কারণে অব্যাহতি দিই নি, এর কারণ ছিল আমি লোকদের জানাতে চাইছিলাম যে বিজয় আল্লাহর তরফ থেকে আসে।" খালিদ (রাঃ)  খলিফার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে নির্দেশ অনুযায়ী আবু উবাইদা (রাঃ) এর অধীনে দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। তিনি বলেছিলেন : " যদি আবু বকর মৃত্যুবরণ করেন আর উমর খলিফা হন, তবে আমরা শুনব এবং মানব  " আবু উবাইদা (রাঃ) এর নেতৃত্বে এরপর সিরিয়া অভিযান চলতে থাকে। আবু উবাইদা খালিদের গুণগ্রাহী ছিলেন। তিনি খালিদ (রাঃ) কে অশ্বারোহী বাহিনীর নেতৃত্ব প্রদান করেন এবং নিজের সামরিক উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেন। মধ্য লেভান...

১. হযরত আদম (আঃ) পর্বঃ-১

বিশ্ব ইতিহাসে প্রথম মানুষ ও প্রথম নবী হিসাবে আল্লাহ পাক আদম (আলাইহিস সালাম)-কে নিজ দু’হাত দ্বারা সরাসরি সৃষ্টি করেন (ছোয়াদ ৩৮/৭৫)। মাটির সকল উপাদানের সার-নির্যাস একত্রিত করে আঠালো ও পোড়ামাটির ন্যায় শুষ্ক মাটির তৈরী সুন্দরতম অবয়বে রূহ ফুঁকে দিয়ে আল্লাহ আদমকে সৃষ্টি করেছেন।[1] অতঃপর আদমের পাঁজর থেকে তাঁর স্ত্রী হাওয়াকে সৃষ্টি করেন।[2] আর এ কারণেই স্ত্রী জাতি স্বভাবগত ভাবেই পুরুষ জাতির অনুগামী ও পরস্পরের প্রতি আকৃষ্ট। অতঃপর স্বামী-স্ত্রীর মাধ্যমে যুগ যুগ ধরে একই নিয়মে মানববংশ বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে। কুরআন-এর বর্ণনা অনুযায়ী প্রথম দিন থেকেই মানুষ পূর্ণ চেতনা ও জ্ঞান সম্পন্ন সভ্য মানুষ হিসাবেই যাত্রারম্ভ করেছে এবং আজও সেভাবেই তা অব্যাহত রয়েছে। অতএব গুহামানব, বন্যমানব, আদিম মানব ইত্যাদি বলে অসভ্য যুগ থেকে সভ্য যুগে মানুষের উত্তরণ ঘটেছে বলে কিছু কিছু ঐতিহাসিক যেসব কথা শুনিয়ে থাকেন, তা অলীক কল্পনা ব্যতীত কিছুই নয়। সূচনা থেকে এযাবত এই দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় মানুষ কখনোই মানুষ ব্যতীত অন্য কিছু ছিল না। মানুষ বানর বা উল্লুকের উদ্বর্তিত রূপ বলে ঊনবিংশ শতাব্দীতে এসে চার্লস ডারউইন (১৮০৯-১৮৮২) যে ‘বিবর্...