মাথায় ভ্রণ বা গুটি হওয়ার কারণ ও প্রতিকার।
মাথার তালু বা স্কাল্পে হঠাৎ গুটি বা ভ্রণ দেখা দেওয়া একটি সাধারণ সমস্যা। এটি অনেক সময় ব্যথাহীন হয়, আবার কখনো সংক্রমণ বা জটিলতার কারণে ব্যথা, লালভাব বা ফোলাভাব দেখা দিতে পারে। এই আর্টিকেলে মাথায় গুটি হওয়ার সম্ভাব্য কারণ, লক্ষণ এবং ঘরোয়া ও চিকিৎসাগত প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
(ছবি: স্কাল্পে সিস্ট বা গুটির উদাহরণ)
মাথায় গুটি হওয়ার প্রধান কারণঃ
১. সেবেসিয়াস সিস্ট (Sebaceous Cyst): তেল গ্রন্থি (সেবেসিয়াস গ্ল্যান্ড) বন্ধ হয়ে গেলে তরল জমে গুটি তৈরি হয়। এটি সাধারণত ব্যথাহীন এবং ধীরে বাড়ে।
২. ফলিকুলাইটিস (Folliculitis): চুলের ফলিকলে ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাসের সংক্রমণে লাল গুটি ও পুঁজ জমতে পারে। এটি চুলকানি বা জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করে।
৩. লাইপোমা (Lipoma): চর্বি কোষ জমে নরম, গুটি তৈরি হয়। সাধারণত ক্ষতিকর নয়, তবে আকার বাড়লে অপসারণ প্রয়োজন হতে পারে।
৪. ডারময়েড সিস্ট (Dermoid Cyst): জন্মগত ত্রুটির কারণে ত্বক, চুল বা অন্যান্য টিস্যু জমে গুটি তৈরি হয়।
৫. ফোড়া বা এবসেস (Abscess): ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে পুঁজ জমে ব্যথাযুক্ত গুটি হয়। জ্বর বা লালভাব দেখা দিতে পারে।
৬. টিউমার (বিরল ক্ষেত্রে): কিছু ক্ষেত্রে বেনাইন বা ম্যালিগন্যান্ট টিউমারও গুটি হিসেবে দেখা দিতে পারে।
(ছবি: ফলিকুলাইটিসের লক্ষণ)
কখন সতর্ক হবেন?
- গুটির আকার দ্রুত বাড়লে।
- তীব্র ব্যথা, জ্বর বা লালাভাব।
- গুটি ফেটে পুঁজ বা রক্ত পড়লে।
- দীর্ঘদিন স্থায়ী হলে।
রোগ নির্ণয় (Diagnosis)
চিকিৎসক সাধারণত শারীরিক পরীক্ষা, আল্ট্রাসাউন্ড, এমআরআই বা বায়োপসির মাধ্যমে গুটির কারণ নির্ণয় করেন।
প্রতিকার ও চিকিৎসা।
ঘরোয়া উপায়:
গরম সেঁক:ফলিকুলাইটিস বা ফোড়ায় গরম পানির সেঁক দিনে ২-৩ বার।
টি-ট্রি অয়েল:অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল প্রপার্টি সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা: স্কাল্প নিয়মিত শ্যাম্পু করুন এবং স্ক্র্যাচ করা এড়িয়ে চলুন।
মেডিকেল চিকিৎসা:
অ্যান্টিবায়োটিক: ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশনের জন্য প্রেসক্রিপশন।
সিস্ট ড্রেনেজ: পুঁজ বা তরল বের করে দেওয়া।
সার্জারি: লাইপোমা বা বড় সিস্ট অপসারণ।
স্টেরয়েড ইনজেকশন: প্রদাহ কমাতে।
প্রতিরোধের উপায়
- স্কাল্প পরিষ্কার ও শুষ্ক রাখুন।
- তেলযুক্ত হেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার কম করুন।
- চুল বা স্কাল্পে আঘাত এড়িয়ে চলুন।
- ব্যক্তিগত জিনিস (চিরুনি, তোয়ালে) শেয়ার করবেন না।
পরিশেষে
মাথায় গুটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাধারণ সমস্যা, তবে কোনো লক্ষণ গুরুতর মনে হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। সঠিক রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসাই জটিলতা রোধ করতে সাহায্য করবে।
*(ছবি: চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ)*
---
লেখক: প্রান্ত আজীম
এই আর্টিকেলটি সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করে অন্যদের সাহায্য করুন! 💡
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন