সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আত্নার খাবার!


মালেক ইবনে ডিনার একদিন এক দ্বীনি দাওয়াতের সমাবেশে ওয়াজ করার সময় এক ব্যক্তি সমাবেশের মধ্যে থেকে উঠে দাড়ালেন এবং বললেন, “তুমি কি সেই মালেক ইবনে ডিনার, যে মাতাল হয়ে বিভিন্ন জায়গায় পড়ে থাকতে?” 

এ কথা শুনার পর মালেক ইবনে ডিনার কিছুক্ষণ চুপ রইলেন তারপর তিনি বললেন, “হ্যাঁ আমি সেই মালেক ইবনে ডিনার যে একসময় মাতাল হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকতো।” এরপর তিনি তার ধার্মিক হওয়ার ঘটনা বলতে আরম্ভ করলেন। তিনি বললেন অন্ধকার জীবনের সময় আমি মদ খেয়ে বাড়ি ফিরতাম। কিন্তু এক কদরের রাত্রে আমি বাহিরে মদ পান না করে মদের বতল নিয়ে বাসায় গেলাম এই ভেবে যে আমি বাসায় গিয়েই মদ পান করবো। বাসায় ফিরে আমি মদের বতল টেবিলের উপর রেখে খাবর খেতে গেলাম, এই সময় আমার ছোট মেয়েটি খেলাধুলা করার সময় তার গায়ে লেগে টেবিলে থাাকা মদের বতলটি পড়ে ভেঙে যায়। তা দেখে  আমি প্রথমে রাগান্বীত হলেও মেয়ের হাসি মুখের দিকে তাকিয়ে নিজেকে সামলে নিয়ে শুয়ে পড়লাম, সে রাত্রে আমার মদ পান করা হলো না।

ঠিক এক বছর পর আবারও কদরের রাত্রে বাড়িতে মদ পান করার জন্য আমি মদের বতল নিয়ে বাড়িতে গেলাম এবং মদের বতল টেবিলে রেখে খাবার খেতে গেলাম। কিছুক্ষন পর টেবিলের কাছে এসে দেখলাম মদের বতলটি অক্ষত আছে।তারপর আমি কান্নায় ভেঙে পড়লাম। কারন আমার মেয়ে গত তিন মাস আগে মারা গিয়েছে। সে রাত্রেও আমি মদ পান না করেই শুয়ে পড়ি। 


আত্নার খাবার!

সে রাত্রে আমি স্বপ্নে দেখি একটা বিশাল আকার সাপ আমাকে তাড়া করছে আমি আমার সবটুকু শক্তি দিয়ে দৌড়াচ্ছিলাম কিন্তু সাপ টি আমার পিছু ছাড়ছে না। পথে এক বৃদ্ধের সাথে আমর দেখা হলো বৃদ্ধ বললো, “আমি খুব দূর্বল আমি তোমাকে সাহায্য করতে পারবো না। তুমি ওই পাহাড়ের ডান দিকে যাও।” এর পর আমি যত দ্রুত সম্ভব পাহাড়ের ডানদিকে দৌড়াতে থাকলাম। একসময় আমি একটা অত্যান্ত সুন্দর জায়গায় পৌঁছালাম। আমি দেখলাম সেখানে অনেক শিশু খেলাধুলা করছে। তা দেখে আমি সেখানের নিকট যেতে লাগলাম কিন্তু সেখানে থাকা দারওয়ান আমাকে বাধা দিল। কিন্তু কিছুক্ষন পর একটা শিশু বললো ওনাকে আসতে দাও। একথা শুনে আমি দেখলাম শিশুটি আমার মেয়ে যা দেখে আমি নিজেকে সামলাতে পারলাম না, আমি দৌড়ে মেয়ের কাছে গেলাম তারপর আমি আমরা মেয়েকে জিজ্ঞাস করলাম, “তুমি এখানে কিভাবে আসলে?” মেয়ে উত্তরে বললো আমি জান্নাতি শিশু।
মেয়ের উত্তরে অবাক অবাক হলাম, তার পর আমি আমার মেয়েকে পথে আসার সময় ভয়ংকর সাপটার কথা বললাম, তখন মেয়ে বললো ওটা তো তোমার নফস, যার দাস তুমি। তুমি সারাজীবন নফসের খাবার জুগিয়েছো। যা এখন ভয়ংকর সাপে পরিনত হয়েছে। তারপর আমি আবার আমার মেয়েকে জিজ্ঞেস করলাম তাহলে ওই বৃদ্ধ লোকটি কে ছিল? জবাবে মেয়ে বললো, “ওইটা তোমার আত্না যাকে তুমি কখনো খাবার দাও নাই, খাবার না পেয়ে সে এখন বৃদ্ধ এবং দূর্বল হয়ে গিয়েছে।” এরপর তার ঘুম ভেঙে যায়।
তারপর মালেক ইবনে ডিনার দ্বীনি দাওয়াতের সমাবেশে উপস্থিত লোকদের উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলেন সে থেকে আমি এখন আমার আত্নার খাবার জোগাড় করছি।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আস্তাগফিরুল্লাহ! বলার ফজিলত নিয়ে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহঃ) এর চমৎকার গল্প অবলম্বনে।

হোম   আল-কুরআন   আল-হাদিস   সংবাদপত্র   চাকরি   পরীক্ষার রেজাল্ট   সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আলহামদুলিল্লাহ!  শুরুতেই বলে রাখি, ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহঃ) ছিলেন ইমাম বুখারী (রহঃ) এর ওস্তাদ। তিনি ১০ লক্ষ হাদিস মুখস্ত রেখেছিলেন। তিনি যে হাদিস গ্রন্থ লিখেছিলেন তার নাম মুসনাদে আহমদ। সেখানে তিনি প্রায় ৪০ হাজার হাদিস লিপিবদ্ধ করেছিলেন। একদিনের_ঘটনা!  ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহঃ) বৃদ্ধ মানুষটি হতভম্ব হয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলেন মসজিদের সামনে! এত রাতে কোন মানুষজনের ঘরে গিয়ে তাঁদের কষ্টের কারণ হতে চান নি তিনি। সেকারণেই চেয়েছিলেন মসজিদেই কাটিয়ে দিবেন রাতটুকু। নফল ছালাত আর কিছুটা ঘুমিয়ে দিব্যি রাত কাটিয়ে দেয়া যেত। কিন্তু বাধ সাধলেন মসজিদের খাদেম। কোন এক অজানা কারণে তাঁকে পছন্দ করলেন না খাদেম। স্রেফ মানা করে দিলেন খাদেম– মসজিদে রাত কাটানো যাবে না। মসজিদের সামনে দাঁড়িয়ে খাদেম সাহেব সেই কথাটি-ই বেশ উঁচু গলায় কথা বলে দিলেন বৃদ্ধকে। মসজিদ সাথে লাগানো রুটির দোকানে মধ্য বয়স্ক একজন বিশাল তন্দুরে রুটি বানাচ্ছেন। খাদেমের চড়া গলা তাঁর কানে পর্যন্ত গেল। রুটি বান...

খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ)।পর্ব- ৪

  উমর (রাঃ) এর যুগ (৬৩৪–৬৪২) খালিদ (রাঃ) এর পদচ্যুতিঃ ৬৩৪ সালের ২২ আগস্ট আবু বকর মৃত্যুবরণ করেন। তিনি উমর (রাঃ) কে নিজের উত্তরসূরি নিয়োগ দিয়ে গিয়েছিলেন। খলিফা হওয়ার পর উমর খালিদকে পদচ্যুত করে আবু উবাইদা (রাঃ) কে সেনাপতি নিয়োগ করেন। খালিদ (রাঃ) অপরাজেয় হওয়ায় অনেক মুসলিম তার কারণে যুদ্ধে বিজয় অর্জিত হচ্ছে বলে বিশ্বাস করতে শুরু করে। এই ব্যাপারে উমর (রাঃ) বলেছিলেন :"আমি খালিদ বিন ওয়ালিদকে আমার ক্রোধ বা তার দায়িত্বহীনতার কারণে অব্যাহতি দিই নি, এর কারণ ছিল আমি লোকদের জানাতে চাইছিলাম যে বিজয় আল্লাহর তরফ থেকে আসে।" খালিদ (রাঃ)  খলিফার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে নির্দেশ অনুযায়ী আবু উবাইদা (রাঃ) এর অধীনে দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। তিনি বলেছিলেন : " যদি আবু বকর মৃত্যুবরণ করেন আর উমর খলিফা হন, তবে আমরা শুনব এবং মানব  " আবু উবাইদা (রাঃ) এর নেতৃত্বে এরপর সিরিয়া অভিযান চলতে থাকে। আবু উবাইদা খালিদের গুণগ্রাহী ছিলেন। তিনি খালিদ (রাঃ) কে অশ্বারোহী বাহিনীর নেতৃত্ব প্রদান করেন এবং নিজের সামরিক উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেন। মধ্য লেভান...

১. হযরত আদম (আঃ) পর্বঃ-১

বিশ্ব ইতিহাসে প্রথম মানুষ ও প্রথম নবী হিসাবে আল্লাহ পাক আদম (আলাইহিস সালাম)-কে নিজ দু’হাত দ্বারা সরাসরি সৃষ্টি করেন (ছোয়াদ ৩৮/৭৫)। মাটির সকল উপাদানের সার-নির্যাস একত্রিত করে আঠালো ও পোড়ামাটির ন্যায় শুষ্ক মাটির তৈরী সুন্দরতম অবয়বে রূহ ফুঁকে দিয়ে আল্লাহ আদমকে সৃষ্টি করেছেন।[1] অতঃপর আদমের পাঁজর থেকে তাঁর স্ত্রী হাওয়াকে সৃষ্টি করেন।[2] আর এ কারণেই স্ত্রী জাতি স্বভাবগত ভাবেই পুরুষ জাতির অনুগামী ও পরস্পরের প্রতি আকৃষ্ট। অতঃপর স্বামী-স্ত্রীর মাধ্যমে যুগ যুগ ধরে একই নিয়মে মানববংশ বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে। কুরআন-এর বর্ণনা অনুযায়ী প্রথম দিন থেকেই মানুষ পূর্ণ চেতনা ও জ্ঞান সম্পন্ন সভ্য মানুষ হিসাবেই যাত্রারম্ভ করেছে এবং আজও সেভাবেই তা অব্যাহত রয়েছে। অতএব গুহামানব, বন্যমানব, আদিম মানব ইত্যাদি বলে অসভ্য যুগ থেকে সভ্য যুগে মানুষের উত্তরণ ঘটেছে বলে কিছু কিছু ঐতিহাসিক যেসব কথা শুনিয়ে থাকেন, তা অলীক কল্পনা ব্যতীত কিছুই নয়। সূচনা থেকে এযাবত এই দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় মানুষ কখনোই মানুষ ব্যতীত অন্য কিছু ছিল না। মানুষ বানর বা উল্লুকের উদ্বর্তিত রূপ বলে ঊনবিংশ শতাব্দীতে এসে চার্লস ডারউইন (১৮০৯-১৮৮২) যে ‘বিবর্...