সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আলেমসমাজ এবং সরকারের ঐক্য।


আলেমসমাজ এবং সরকার আমাদের দেশের জন্য অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ন বিষয়। বাংলাদেশের জন্য উভয়ের ভূমিকা এবং প্রয়োজন কথায় বলে শেষ করা সম্ভব না। সরকার ছাড়া একটি দেশ কল্পনা করা যায় না। আবার একটি দেশ এর জনগনকে সঠিকভাবে বুঝানো, সামাজিক অবক্ষয় রোধ করতে আলেমসমাজই গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখে। তাই আজকের পর্বে আমরা আলেমসমাজ এবং সরকার এর গুরুত্ব ও তাদের ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করবো।

প্রথমে জানবো কারা চায় আলেমসমাজ এবং সরকারের মধ্যে ফটল ধরুক অথবা সরকার আলেমসমাজকে দমন পীড়ন  করুক! 

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং আলেমদের মুনাজাতের দৃশ্য।


প্রথমত, যারা ইসলাম বিদ্বেষী তারা চায় সরকার যেন কোন মতেই আলেমসমাজ কে গনায় না ধরে। আলেমসমাজকে দমনপীড়ন করে ইসলামের আওয়াজ বন্ধ করুক যাতে ইসলাম এই দেশে দূর্বল থাকে এবং শয়তান এর রাজত্ব চলে।
দ্বিতীয়ত, যারা বাংলাদেশের ধ্বংস চায় তারা। মূলত তারা বাংলাদেশকে একটি দূর্বল রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চায়। বাংলাদেশে আলেমসমাজের একটা প্রভাব আছে। যদি সরকারের সাথে আলেমসমাজের দূরত্ব তৈরী হয় তাহলে সরকারই ক্ষতিগ্রস্থ হবে এবং সরকার দূর্বল হয়ে পড়ার সম্ভাবনা তৈরী হবে।আর একটি সরকার দূর্বল হওয়া মানেই একটা রাষ্ট্র দূর্বল হয়ে পড়া।
মূলত এই দুই প্রকারের লোকই চায় সরকার এবং আলেমসমাজের মধ্যে দূরত্ব তৈরী হউক।

২০১৩ সালের পর থেকে সরকার শক্তিশালী হয়েছে এর মূল কারণ হচ্ছে আলেমসমাজের সাথে সরকারের সক্ষ্যতা।

সরকারের সাথে ২০১৩ পর্যন্ত আলেমসমাজের দূরত্ব এবং তিক্ততা চরম পর্যায়ে পৌঁছেছিল। তখন সরকারের অবস্থা ও নড়বড়ে হয়ে পড়ে। এতে বাংলাদেশের অবস্থা নাজুক হওয়ার সম্ভবনা  তৈরী হয়। কিন্তু আল্লাহর অশেষ রহমতে সরকারের সাথে আলেমসমাজের সক্ষ্যতার সম্পর্ক  তৈরী হয়। তারপর থেকে সরকার বিভিন্ন দেশবিরুধী ষড়যন্ত্র আলেমসমাজকে সাথে নিয়েই মোকাবিলা করেছে।
আলেমসমাজকে সাথে নিয়ে সরকারের বিভিন্ন ষড়যন্ত্র মোকাবিলার কয়েকটি চিত্র নিচে তুলে ধরা হলো।

১. জঙ্গি দমনঃ বাংলাদেশে নিয়ে ষড়যন্ত্র হয় জঙ্গিবাদ উত্থান ঘটিয়ে। মুসলামান দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ যেহেতু ৪র্থ বৃহত্ত মুসলিম রাষ্ট্র সেহেতু জঙ্গিবাদের মাধ্যমে বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে তুলে ধরাই ছিল এই ষড়যন্ত্রের মূল উদ্দেশ্য।কিন্ত এই পর্যয়ে সরকার সরাসরি আলেমসমাজের সহয়তা কামনা করে। আর আলেমসমাজ সরাসরি জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে  জনমত গড়ে তুলতে সক্ষম হয় এবং ইসলামের সঠিক জ্ঞান জনগনের নিকট তুলে ধরতেও সমর্থ্য হয়। সরকার এবং আলেমসমাজের মধ্যে ভালো সম্পর্ক থাকায় জঙ্গিবাদ মোকাবেলা করা সহজ হয়েছে।

২. সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রতিরোধঃ প্রতিবেশী মিয়ানমার এবং ভারতে ক্রমাগত সরকারি ভাবে ইসলাম বিদ্বেষ ছড়িয়ে মুসলমান নিধনের সময় বাংলাদেশ নিয়ে ষড়যন্ত্র হয়েছিল যাতে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগিয়ে মুসলমান নিধন কে বৈধতা দেওয়া যায়। কিন্ত আলেমসমাজ অমুসলিমদের রক্ষায় মুসলমানদের ভূমিকা রাখতে বলেন পাশাপাশি  ইসলামে অমুসলিমদের অধিকার তুলে ধরে জনগনকে সচেতন করেন।যার ফলে নিশ্চিত দাঙ্গা থেকে দেশ রক্ষা পায়।

৩. করোনা মোকাবেলাঃ করোনা মোকাবেলায় সরকারকে প্রত্যক্ষ সহয়তা করেছে আলেমসমাজ। জনগনকে কুরআন এবং হাদিসের মাধ্যমে বুঝিয়েছে মহামারির সময় করনীয় কি! আলেমসমাজ করোনার মধ্যেও দাফন কাফনের ব্যবস্থা করেছে, যেখানে নিজের সন্তান বা আপনজন এগিয়ে আসেনি তখন আলেমসমােই এগিয়ে এসেছিল।

মূলত যারা সরকার এবং আলেমসমাজের মধ্যে দন্ধ লাগাতে চায় তারা চায় বাংলাদেশ দূর্বল থাকুক। তারা চায়  বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ এর উত্থান ঘটিয়ে বাংলাদেশকে সিরিয়া বানাতে। যা তখনই সম্ভব যখন আলেমসমাজ এবং সরকারের মধ্যে দূরত্ব তৈরী হবে।
একটি দেশের সরকার হচ্ছে দেশের মেরুদন্ড এবং আলেমসমাজ হচ্ছে মস্তিষ্ক। দেশের সরকার যদি দূর্বল হয় তাহলে সে দেশ সোজা হয়ে দাড়াতে পারে না আর যদি আলেমসমাজ দূর্বল হয় তাহলে সে দেশের জাতি নষ্টামি, রাহাজানি, জাহেলিয়াতে ডুবে যায়। আলেমসমাজ আমাদের পথপদর্শক হিসেবে কাজ করে তারা আমাদের আল্লাহ বিরুধী কাজ থেকে সতর্ক করবেন এটাই স্বাভাবিক। এটাকে ইস্যূ করাই মুলত মূর্খামী, আমাদের আলেমসমাজকে যথাযথ সম্মান দেওয়া উচিৎ। কেউই ভুল মুক্ত না । মানুষ মাত্রই ভুল, সরকারের ভুলধরা মানেই সরকার বিরোধী না। পরিবারের লোকেরাই পরিবারের সদস্যদের ভুল বেশি ধরে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আস্তাগফিরুল্লাহ! বলার ফজিলত নিয়ে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহঃ) এর চমৎকার গল্প অবলম্বনে।

হোম   আল-কুরআন   আল-হাদিস   সংবাদপত্র   চাকরি   পরীক্ষার রেজাল্ট   সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আলহামদুলিল্লাহ!  শুরুতেই বলে রাখি, ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহঃ) ছিলেন ইমাম বুখারী (রহঃ) এর ওস্তাদ। তিনি ১০ লক্ষ হাদিস মুখস্ত রেখেছিলেন। তিনি যে হাদিস গ্রন্থ লিখেছিলেন তার নাম মুসনাদে আহমদ। সেখানে তিনি প্রায় ৪০ হাজার হাদিস লিপিবদ্ধ করেছিলেন। একদিনের_ঘটনা!  ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহঃ) বৃদ্ধ মানুষটি হতভম্ব হয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলেন মসজিদের সামনে! এত রাতে কোন মানুষজনের ঘরে গিয়ে তাঁদের কষ্টের কারণ হতে চান নি তিনি। সেকারণেই চেয়েছিলেন মসজিদেই কাটিয়ে দিবেন রাতটুকু। নফল ছালাত আর কিছুটা ঘুমিয়ে দিব্যি রাত কাটিয়ে দেয়া যেত। কিন্তু বাধ সাধলেন মসজিদের খাদেম। কোন এক অজানা কারণে তাঁকে পছন্দ করলেন না খাদেম। স্রেফ মানা করে দিলেন খাদেম– মসজিদে রাত কাটানো যাবে না। মসজিদের সামনে দাঁড়িয়ে খাদেম সাহেব সেই কথাটি-ই বেশ উঁচু গলায় কথা বলে দিলেন বৃদ্ধকে। মসজিদ সাথে লাগানো রুটির দোকানে মধ্য বয়স্ক একজন বিশাল তন্দুরে রুটি বানাচ্ছেন। খাদেমের চড়া গলা তাঁর কানে পর্যন্ত গেল। রুটি বান...

খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ)।পর্ব- ৪

  উমর (রাঃ) এর যুগ (৬৩৪–৬৪২) খালিদ (রাঃ) এর পদচ্যুতিঃ ৬৩৪ সালের ২২ আগস্ট আবু বকর মৃত্যুবরণ করেন। তিনি উমর (রাঃ) কে নিজের উত্তরসূরি নিয়োগ দিয়ে গিয়েছিলেন। খলিফা হওয়ার পর উমর খালিদকে পদচ্যুত করে আবু উবাইদা (রাঃ) কে সেনাপতি নিয়োগ করেন। খালিদ (রাঃ) অপরাজেয় হওয়ায় অনেক মুসলিম তার কারণে যুদ্ধে বিজয় অর্জিত হচ্ছে বলে বিশ্বাস করতে শুরু করে। এই ব্যাপারে উমর (রাঃ) বলেছিলেন :"আমি খালিদ বিন ওয়ালিদকে আমার ক্রোধ বা তার দায়িত্বহীনতার কারণে অব্যাহতি দিই নি, এর কারণ ছিল আমি লোকদের জানাতে চাইছিলাম যে বিজয় আল্লাহর তরফ থেকে আসে।" খালিদ (রাঃ)  খলিফার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে নির্দেশ অনুযায়ী আবু উবাইদা (রাঃ) এর অধীনে দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। তিনি বলেছিলেন : " যদি আবু বকর মৃত্যুবরণ করেন আর উমর খলিফা হন, তবে আমরা শুনব এবং মানব  " আবু উবাইদা (রাঃ) এর নেতৃত্বে এরপর সিরিয়া অভিযান চলতে থাকে। আবু উবাইদা খালিদের গুণগ্রাহী ছিলেন। তিনি খালিদ (রাঃ) কে অশ্বারোহী বাহিনীর নেতৃত্ব প্রদান করেন এবং নিজের সামরিক উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেন। মধ্য লেভান...

১. হযরত আদম (আঃ) পর্বঃ-১

বিশ্ব ইতিহাসে প্রথম মানুষ ও প্রথম নবী হিসাবে আল্লাহ পাক আদম (আলাইহিস সালাম)-কে নিজ দু’হাত দ্বারা সরাসরি সৃষ্টি করেন (ছোয়াদ ৩৮/৭৫)। মাটির সকল উপাদানের সার-নির্যাস একত্রিত করে আঠালো ও পোড়ামাটির ন্যায় শুষ্ক মাটির তৈরী সুন্দরতম অবয়বে রূহ ফুঁকে দিয়ে আল্লাহ আদমকে সৃষ্টি করেছেন।[1] অতঃপর আদমের পাঁজর থেকে তাঁর স্ত্রী হাওয়াকে সৃষ্টি করেন।[2] আর এ কারণেই স্ত্রী জাতি স্বভাবগত ভাবেই পুরুষ জাতির অনুগামী ও পরস্পরের প্রতি আকৃষ্ট। অতঃপর স্বামী-স্ত্রীর মাধ্যমে যুগ যুগ ধরে একই নিয়মে মানববংশ বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে। কুরআন-এর বর্ণনা অনুযায়ী প্রথম দিন থেকেই মানুষ পূর্ণ চেতনা ও জ্ঞান সম্পন্ন সভ্য মানুষ হিসাবেই যাত্রারম্ভ করেছে এবং আজও সেভাবেই তা অব্যাহত রয়েছে। অতএব গুহামানব, বন্যমানব, আদিম মানব ইত্যাদি বলে অসভ্য যুগ থেকে সভ্য যুগে মানুষের উত্তরণ ঘটেছে বলে কিছু কিছু ঐতিহাসিক যেসব কথা শুনিয়ে থাকেন, তা অলীক কল্পনা ব্যতীত কিছুই নয়। সূচনা থেকে এযাবত এই দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় মানুষ কখনোই মানুষ ব্যতীত অন্য কিছু ছিল না। মানুষ বানর বা উল্লুকের উদ্বর্তিত রূপ বলে ঊনবিংশ শতাব্দীতে এসে চার্লস ডারউইন (১৮০৯-১৮৮২) যে ‘বিবর্...