সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

মরােক্কা থেকে মক্কা


সত্য ঘটনা অবলম্বনে হেদায়েতের গল্প,

লায়লা আলী হেল্যূ। মরােক্কোর এক বােন । তার ব্রেষ্ট ক্যান্সার হয়েছিল । বিজ্ঞ ডাক্তারগণ তার বেঁচে থাকার আশা একদম ছেড়েই দিয়েছিলেন । ইউরােপের । সেরা সেরা ট্রিটমেন্ট দেয়া হয়েছিল । কিন্তু ফলাফল শূন্য । তার আর কোন সম্ভাবনাই ছিল না বেঁচে থাকার । এমনকি লায়লা নিজেও সব আশা হারিয়ে ফেলেছিল । কিন্তু সর্বশক্তিমান আল্লাহ তাকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন । বােন লায়লার সে অলৌকিক ঘটনা তার মুখ থেকেই শােনা যাক ইন শা আল্লাহ – “ নয় বছর আগের ঘটনা । আমার ব্রেস্ট ক্যান্সার ধরা পরে । সবাই জানে।
“ ক্যান্সার ” শব্দটা কতটুকু ভীতিকর ।
আল্লাহর উপর ঈমান খুবই দুর্বল ছিল আমার।
আমি আল্লাহর স্মরণ থেকে সম্পূর্ণরূপে দূরে সরে গিয়েছিলাম । আর ভাবতাম আমার এই সৌন্দর্য ও সুস্বাস্থ্য সারা জীবন অটুট থাকবে । আমি কখনই ভাবিনি , ক্যান্সারের মতাে মরণব্যাধি আমার শরীরে বাসা বাঁধবে । আমি যখন আমার রােগের ব্যাপারে জানতে পারি তখন খুব করে এটা থেকে মুক্তি পেতে চাচ্ছিলাম । পালাবার পথ খুঁজতাম । বাঁচতে চাইতাম । কিন্তু সে পথ কোথায় ? পৃথিবীর কোন প্রান্তে যাব আমি , এই মরণব্যাধি থেকে কীভাবে মুক্তি পাব ?
একবার আত্মহত্যার কথাও ভেবেছিলাম । কিন্তু আমি আমার স্বামী আর সন্তানদের খবুই ভালবাসতাম । তাছাড়া ইসলামিক শারিয়াহ অনুযায়ী আত্মহত্যার মত মহাপাপের শাস্তি কি হবে সেটাও ভাবনায় আসেনি তখন ।
কারণ , আমি আগেই বলেছি , আমি আল্লাহর স্মরণ থেকে একদম দূরে ছিলাম । আল - হামদুলিল্লাহ ! মহান আল্লাহর ইচ্ছায় এই মরণব্যাধি আমার হিদায়েতের কারণ হয়েছে । আর আমি মনে করি অনেক গাফেল মানুষের জন্য আমার এই ঘটনা হিদায়েতের কারণ হবে ইন শা আল্লাহ । আমি বেলজিয়ামে গিয়েছিলাম ।
সেখানে অনেক ডাক্তার দেখিয়েছিলাম । তারা আমার স্বামীকে বলেছিল , প্রথমে আমার স্তন অপসারণ করতে হবে । তারপর কিছু নির্দিষ্ট ঔষধ দিবে । আমি জানতাম , এই ধরনের পাওয়ারফুল ঔষধ খেলে আমার চুল পড়ে যাবে , চোখ ঝলসে যাবে আর আমি অন্ধও হয়ে যাব । এমনকি এই ঔষধ সেবন করলে মুখের উপর দাড়ি গজায় , নখ ও দাঁত ভেঙে যায় । আমি কোনােভাবেই সেই ওষুধ খেতে রাজী হলাম না ।
আমি ডাক্তারকে তুলনামূলকভাবে কম কার্যকর অন্য কোন ওষুধের কোর্স দিতে বললাম । মরােক্কো চলে এলাম । সেখানে যাওয়ার পর আমার শরীরে খারাপ কোনােকিছুর প্রভাব অনুভব করতাম না । আমি এতটাই সুস্থতা অনুভব করছিলাম যে , ভাবতাম ডাক্তার হয়তাে ভুল রিপাের্ট দিয়েছে , আসলে আমার ক্যান্সারই হয়নি । কিন্তু প্রায় ছয় মাস পরে খবু দ্রুত আমার ওজন কমতে শুরু করে । আমার শরীরের রং পরিবর্তন হয়ে যায় , শরীর জুড়ে ক্রমাগত ব্যথা শুরু হয় । এই হাল দেখে আমার মরােক্কান ডাক্তার আমাকে ইউরােপে ফিরে যাওয়ার । পরামর্শ দিলেন । আমরা তার কথামত রওয়ানা দেই । সেখানকার ডাক্তাররা আমার স্বামীকে বলেছিল , আমার ফুসফুসে ক্যান্সার সম্পূর্ণভাবে সংক্রমিত হয়ে গেছে ।
মরােক্কা থেকে মক্কা

এখন আর এই আমার জন্য কোনাে চিকিৎসার পথ খােলা নেই । তারা আমার স্বামীকে বলেছিল , “ আপনার স্ত্রীকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যান , সে আর বেশী দিন বাঁচবে না ” । আমার স্বামী মরােক্কোতে ফিরে যাওয়ার পরিবর্তে আমাকে নিয়ে ফ্রান্সে গেলেন । উন্নত চিকিৎসার জন্য । মনে হল আমরা ফ্রান্সে গিয়ে বেলজিয়ামের চেয়েও ভালাে চিকিৎসা পেলাম । অবশেষে , আমরা অপারেশান করে আমার স্তন অপসারণের জন্য হাসপাতালে । ভর্তি হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম । পাশাপাশি ডাক্তারদের নির্দেশিত ঔষধ সেবন করতেও ইচ্ছা পােষণ করলাম । ঠিক এই সময় আমার স্বামী এমন কিছু নিয়ে ভাবেন যা আমার চিন্তাতেও আসেনি কখনাে । তিনি আমাকে নিয়ে মক্কায় আল্লাহর ঘর তাওয়াফ করার ইচ্ছা পােষণ করল । এটা শুনে আল্লাহর প্রতি
প্রবল ভালােবাসা অনুভব করলাম আমি । পবিত্র ঘর , আল্লাহর ঘরে যাওয়ার জন্য বুকটা যেন ফেটে যাচ্ছিল । মন চাচ্ছিল , তখনই আল্লাহর ঘরে গিয়ে আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে । আমার এই সমস্যাটির সমাধান চাইতে । প্রথমবারের মত পবিত্র কা'বা ঘর তাওয়াফ করার সুযােগ পেয়ে আমার খুব খুশি লাগছিল আর প্রথমবারের মত আমি প্যারিস থেকে কুরআনের একটি কপিও কিনে ফেললাম । আমরা সােজা মক্কায় গেলাম । যখন পবিত্র মাসজিদে প্রবেশ করলাম আর প্রথমে কা'বাকে দেখলাম , তখন চিৎকার করে কেঁদে ফেললাম । বলতে লাগলাম , “ সুবহানাল্লাহ ! আল্লাহর ইবাদতের জায়গা , পবিত্র মাসজিদ , মুসলিমদের বিশাল জনগােষ্ঠী , তাদের মহানুভবতা , দানশীলতা আর আমার রবের কি নিখুঁত মহিমা ” ।
আমি চিৎকার করে কাঁদতে থাকলাম । আমি জানি , আমি কোনদিনই এখানে আসতে পারতাম না যদি না আমার রব চাইতেন । আমি দুনিয়াবী কাজে এতটাই ডুবে গিয়েছিলাম যে , এখানে আসার সুযােগের সন্ধানও করেনি কোনদিন । আমি দু'আ করতে লাগলাম “ হে আমার রব ! ডাক্তাররা আমাকে নিরাময় করতে অক্ষম কিন্তু তুমি অক্ষম নও , বরং তুমি তাে প্রত্যেক রােগের নিরাময় করে থাকো , এই মুহূর্তে তােমার দয়ার দরজা ছাড়া আমার কাছে আর কোন । দরজাই অবশিষ্ট নেই , দয়া করাে ওহ আল্লাহ ! রহম করাে ” ।
আমি দু'আ করছিলাম আর কাবা তাওয়াফ করছিলাম । আল্লাহ আমাকে হতাশ করেননি । খালি হাতেও ফিরিয়ে দেননি , আল - হামদুলিল্লাহ ! আগেই বলেছি যে , আল্লাহর দ্বীনের ব্যাপারে আমি সম্পূর্ণ অজ্ঞ ছিলাম । তাই সেখানকার বিজ্ঞ আলেমদের কাছে গেলাম । অনুরােধ করলাম যেন আমাকে মৌলিক ইলম । অর্জনের জন্য যে কোন কিতাবের নির্দেশনা দেন , যেটা পড়ে সহজেই তাওবার নিয়ম শেখা যায় । তারা আমাকে বেশী বেশী কুর’আন তিলাওয়াত করার নাসীহা দেন । তারা আমাকে জমজমের পানি দিয়ে প্রচুর পরিমাণে ‘ তাদ্বাল্লুউ " করার পরামর্শ দেন।
( তাদ্বাল্লুউ : জমজমের পানি ততক্ষণ পান করা যতক্ষণ - না তা পাঁজর পর্যন্ত পৌঁছায় ) । আর উঠতে বসতে আল্লাহর যিকির করার উপদেশ দেন । নাবী (সা), -এর উপর বেশি বেশি দরুদ ও সালাম পেশ করতেও বলেন ।
বিশ্বাস করুন ! আল্লাহ'র এই পবিত্র ঘরে আমি খুব নিরাপদ বােধ করছিলাম । আমি আমার স্বামীকে অনুরােধ করেছিলাম তিনি যেন আমাকে হােটেলে না নিয়ে যান । কা'বা প্রাঙ্গণেই প্রতিটি মুহুর্ত কাঁটাতে চেয়েছিলাম । তিনি আমাকে অনুমতি দিলেন সেখানে থাকার জন্য । পবিত্র কা'বা প্রাঙ্গণে আমার পাশেই কিছু মিশরীয় ও তুর্কীস্থানের বােন ছিল । তারা আমাকে এত কান্নাকাটি করার কারণ জিজ্ঞেস করেছিল । আমি তাদের বলেছিলাম , আমি এই প্রথম আল্লাহর ঘরে এসেছি , কখনাে ভাবিনি যে আমি এতটা ভালােবেসে ফেলব । এই পবিত্র প্রাঙ্গণকে ' । আমি তাদেরকে আমার ক্যান্সারের কথাও বলেছিলাম । তারা সবসময় আমার পাশেই থাকত । এক মুহূর্তের জন্য আমাকে ছাড়ত না । তারাও তাদের স্বামীদের কাছ থেকে আমার সাথে মাসজিদে থাকার অনুমতি নিয়েছিল ।
সেই রাতগুলিতে আমাদেরকে তেমন ঘুম পেত না , খাওয়া দাওয়া তাে নেই বললেই চলে ;
যা - ও খেতাম , তাও খুবই সামান্য পরিমাণে । তবে জমজমের পানি খেতাম প্রচুর পরিমাণে । এ ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (সা) বলেন , “ নিশ্চয়ই তা সুখাদ্য এবং রােগের শিফা । '
সহিহ্ মুসলিম হাদিস নং ২৪৭৩
অপর হাদিসে তিনি (সা) বলেন , ‘ জমজমের পানি যে উদ্দেশ্যেই পান করা হয় তা পূরণ হবে।
ইবনু মাজাহ, হাদিস নং ৩০৬২
কা'বা প্রাঙ্গণে থাকাকালীন আমরা কোন ক্ষুধা অনুভব করতাম না । আমরা আল্লাহর ঘর তাওয়াফ করেই যাচ্ছিলাম তাে যাচ্ছিলাম । আর মুখে লেগে থাকত কুর’আনের সুমিষ্ট আয়াতসমূহ । আমাদের রাতদিন , প্রতিটি ক্ষণ , প্রতিটি মুহূর্ত এভাবেই পার হতে লাগল । যখন আমি রােগাক্রান্ত ও পাতলা শরীর নিয়ে আল্লাহর ঘরে এসেছিলাম । আমার শরীরের ঊর্ধ্ব অংশ এবং আমার বুক স্ফীত হয়ে এসেছিল ।
বুক থেকে রক্ত পুঁজ আসত বিধায় বুকের উপরের চারপাশটাতে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়েছিল । পরিচিত সেই দ্বীনি বােনেরা আমার শরীরের উপরের অংশে জমজমের পানি দিয়ে ধুয়ে - মুছে দিত প্রতিনিয়ত । কিন্তু আমি ওই অংশটা স্পর্শ করতে ভয় পেতাম । আমার অসুস্থতা আমার মনে ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছিল । ভয়টা আমাকে এতটাই পেয়ে বসেছিল যে , আমার কাছে মনে হত এই অসুস্থতার কথা মনে । রাখতে গিয়েই আমি আমার রবের ইবাদত ঠিকঠাক করতে পারব না । তাই , আমি শুধু জমজমের পানি দিয়ে শরীর ধুয়ে ফেলতাম আর ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়া অংশের দিকে কোন ভ্রক্ষেপই করতাম না । মাথায় শুধু একটাই চিন্তা , আর তা হলাে কিভাবে আমার রবের সন্তুষ্টি অর্জন করব ।
পঞ্চম দিন । আমার বােনেরা একপ্রকার জোর করেই বসল । আমি যেন আমার পুরাে শরীর জমজমের পানি দিয়ে ধুয়ে মুছে ফেলি । শুরুতে আমি রাজী হইনি । কিন্তু মনে হল কিছু একটা আমাকে বাধ্য করেছিল তাদের । প্রস্তাবে সাড়া দেওয়ার জন্য । ধীরে ধীরে উপরের অংশটুকু পরিষ্কার করতে যাচ্ছিলাম , যে অংশ থেকে নিজেকে এড়িয়ে রেখেছিলাম এতদিন ।
খুব ভয় লাগছিল । আবারও আমার মনে হল , আমাকে বাধ্য করা হচ্ছে যে , এটা করাে , এক্ষুণি করাে । একপ্রকার জোর করেই বুকের উপর চলে এলাম । সুবহানাল্লাহ ! অবিশ্বাস্য ! আমার বুকে কোন পচন নেই , রক্ত নেই আর কোন পুঁজও নেই । নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না । ভালাে করে এদিক সেদিক দেখলাম ।
কিন্তু নেই সেরকম কিছুই নেই , একদম নেই । আমি চিৎকার দিয়ে উঠলাম । আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা চাইলে কী না করতে পারেন ? যাবতীয় ক্ষমতা ও শক্তি তাে তারই এখতিয়ারে । এক বােনকে হাত দিয়ে ভাল করে দেখতে বললাম । সে দেখল , সব ঠিক হয়ে গেছে । উপস্থিত বােনদের সবাই চিৎকার দিয়ে তাকবীর ধ্বনি দিল , আল্লাহু আকবর ! আল্লাহু আকবর ! আল্লাহু আকবর ! দৌড়ে চলে গেলাম হােটেলে , আমার স্বামীর কাছে । তাকে দেখামাত্রই বললাম , ” আল্লাহ’র দয়া দেখ ” , সে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিল না । আমার মতাে সেও চিৎকার করে কেঁদে দিলাে। বলল , “ তুমি কি আমার সেই প্রিয়তমা যাকে ডাক্তাররা ঘােষণা করেছে সে আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যেই মারা যাবে ? আমি বললাম ,
“ হ্যাঁ গাে হ্যাঁ ! আমি সেই !, তাক্বদীর একমাত্র আল্লাহর হাতে ” ।
যাবতীয় প্রশংসা একমাত্র তার । কাল কী হবে একমাত্র তিনিই তা জানেন । তিনি সবকিছু জানেন । আমরা সপ্তাহখানেকের মত পবিত্র নগরী মক্কায় ছিলাম । আল্লাহর অগণিত নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করেছিলাম । এরপর সেখান থেকে মদিনায় নবী (সা), - এর মাসজিদ মাসজিদে নববীতে গিয়েছিলাম । সেখান থেকে সােজা ফ্রান্স । সেখানকার ডাক্তাররা আমার বর্তমান অবস্থা দেখে দ্বিধায় পড়ে গেলেন । খুব অবাকও হলেন বটে । পুরাে ব্যাপারটা তাদের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছিল। তারা বলল “ আপনি কি সেই আপনি " ? আমি গর্বের সাথেই বললাম , “ হ্যাঁ ! আমি সেই আমি , আর এই হলাে আমার স্বামী ” । আমরা আল্লাহর রুঙ্কুকে আঁকড়ে ধরেছি । তার উপরেই ভরসা করেছি । তারা শুধু এটুকুই বলল , “ আপনার ব্যাপারটা রহস্যে ঘেরা ” । তারা আবার আমাকে
পরীক্ষা - নিরীক্ষা করতে চাইল । পরীক্ষা করালাম , কিন্তু তারা আমার শরীরের কিছুই খুঁজে পেল না , ক্যান্সার গায়েব। আল্লাহু আকবর !
আমি সীরাহ ( নবী (সা) -এর জীবনী ) পড়েছি । সাহাবা রদ্বিয়াল্লাহু ‘ য়ানহু ওয়া আজমাঈনদের জীবনী পড়েছি । প্রচুর কেদেছি , কাঁদতে বাধ্য হয়েছি । জাহিলিয়াতে ডুবে থেকে জীবনের অনেক বড় একটা অংশ নষ্ট করার জন্য বারবার অনুতপ্তও হয়েছি । আজ আমি আল্লাহ্ ও তার রসূল (সা) -এর অফুরন্ত ভালােবাসা খুঁজে পেয়েছি । এখন আমি মহান আল্লাহর অনুতপ্ত এক বান্দী । যে তার রবকে মনেপ্রাণে ভালােবাসে । এখনকার প্রতিটি ক্ষণ , প্রতিটি মুহুর্ত তাকে ভালবাসার চেষ্টাতেই কাটে আমার ।
আবদুল্লাহ ইবনে উমর ( রা) থেকে বর্ণিত , রাসুলুল্লাহ (সা) বলেছেন
, “ তােমাদের মধ্যে যার জন্য দোয়ার দ্বার খােলা হয়েছে ( অর্থাৎ যার দোয়া করার তাওফিক হয়েছে ) , তার জন্য রহমতের দ্বার খােলা হয়েছে । আল্লাহর কাছে যেসব দোয়া চাওয়া হয় , তন্মধ্যে তাঁর কাছে সর্বাধিক পছন্দীয় হলাে আফিয়াত ; অর্থাৎ নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যের জন্য দোয়া করা । ”
(জামে তিরমিজি খন্ড ৫ পৃষ্টা ৫৫২ হাদিস ৩৫৪৮

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আস্তাগফিরুল্লাহ! বলার ফজিলত নিয়ে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহঃ) এর চমৎকার গল্প অবলম্বনে।

হোম   আল-কুরআন   আল-হাদিস   সংবাদপত্র   চাকরি   পরীক্ষার রেজাল্ট   সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আলহামদুলিল্লাহ!  শুরুতেই বলে রাখি, ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহঃ) ছিলেন ইমাম বুখারী (রহঃ) এর ওস্তাদ। তিনি ১০ লক্ষ হাদিস মুখস্ত রেখেছিলেন। তিনি যে হাদিস গ্রন্থ লিখেছিলেন তার নাম মুসনাদে আহমদ। সেখানে তিনি প্রায় ৪০ হাজার হাদিস লিপিবদ্ধ করেছিলেন। একদিনের_ঘটনা!  ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহঃ) বৃদ্ধ মানুষটি হতভম্ব হয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলেন মসজিদের সামনে! এত রাতে কোন মানুষজনের ঘরে গিয়ে তাঁদের কষ্টের কারণ হতে চান নি তিনি। সেকারণেই চেয়েছিলেন মসজিদেই কাটিয়ে দিবেন রাতটুকু। নফল ছালাত আর কিছুটা ঘুমিয়ে দিব্যি রাত কাটিয়ে দেয়া যেত। কিন্তু বাধ সাধলেন মসজিদের খাদেম। কোন এক অজানা কারণে তাঁকে পছন্দ করলেন না খাদেম। স্রেফ মানা করে দিলেন খাদেম– মসজিদে রাত কাটানো যাবে না। মসজিদের সামনে দাঁড়িয়ে খাদেম সাহেব সেই কথাটি-ই বেশ উঁচু গলায় কথা বলে দিলেন বৃদ্ধকে। মসজিদ সাথে লাগানো রুটির দোকানে মধ্য বয়স্ক একজন বিশাল তন্দুরে রুটি বানাচ্ছেন। খাদেমের চড়া গলা তাঁর কানে পর্যন্ত গেল। রুটি বান...

খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ)।পর্ব- ৪

  উমর (রাঃ) এর যুগ (৬৩৪–৬৪২) খালিদ (রাঃ) এর পদচ্যুতিঃ ৬৩৪ সালের ২২ আগস্ট আবু বকর মৃত্যুবরণ করেন। তিনি উমর (রাঃ) কে নিজের উত্তরসূরি নিয়োগ দিয়ে গিয়েছিলেন। খলিফা হওয়ার পর উমর খালিদকে পদচ্যুত করে আবু উবাইদা (রাঃ) কে সেনাপতি নিয়োগ করেন। খালিদ (রাঃ) অপরাজেয় হওয়ায় অনেক মুসলিম তার কারণে যুদ্ধে বিজয় অর্জিত হচ্ছে বলে বিশ্বাস করতে শুরু করে। এই ব্যাপারে উমর (রাঃ) বলেছিলেন :"আমি খালিদ বিন ওয়ালিদকে আমার ক্রোধ বা তার দায়িত্বহীনতার কারণে অব্যাহতি দিই নি, এর কারণ ছিল আমি লোকদের জানাতে চাইছিলাম যে বিজয় আল্লাহর তরফ থেকে আসে।" খালিদ (রাঃ)  খলিফার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে নির্দেশ অনুযায়ী আবু উবাইদা (রাঃ) এর অধীনে দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। তিনি বলেছিলেন : " যদি আবু বকর মৃত্যুবরণ করেন আর উমর খলিফা হন, তবে আমরা শুনব এবং মানব  " আবু উবাইদা (রাঃ) এর নেতৃত্বে এরপর সিরিয়া অভিযান চলতে থাকে। আবু উবাইদা খালিদের গুণগ্রাহী ছিলেন। তিনি খালিদ (রাঃ) কে অশ্বারোহী বাহিনীর নেতৃত্ব প্রদান করেন এবং নিজের সামরিক উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেন। মধ্য লেভান...

১. হযরত আদম (আঃ) পর্বঃ-১

বিশ্ব ইতিহাসে প্রথম মানুষ ও প্রথম নবী হিসাবে আল্লাহ পাক আদম (আলাইহিস সালাম)-কে নিজ দু’হাত দ্বারা সরাসরি সৃষ্টি করেন (ছোয়াদ ৩৮/৭৫)। মাটির সকল উপাদানের সার-নির্যাস একত্রিত করে আঠালো ও পোড়ামাটির ন্যায় শুষ্ক মাটির তৈরী সুন্দরতম অবয়বে রূহ ফুঁকে দিয়ে আল্লাহ আদমকে সৃষ্টি করেছেন।[1] অতঃপর আদমের পাঁজর থেকে তাঁর স্ত্রী হাওয়াকে সৃষ্টি করেন।[2] আর এ কারণেই স্ত্রী জাতি স্বভাবগত ভাবেই পুরুষ জাতির অনুগামী ও পরস্পরের প্রতি আকৃষ্ট। অতঃপর স্বামী-স্ত্রীর মাধ্যমে যুগ যুগ ধরে একই নিয়মে মানববংশ বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে। কুরআন-এর বর্ণনা অনুযায়ী প্রথম দিন থেকেই মানুষ পূর্ণ চেতনা ও জ্ঞান সম্পন্ন সভ্য মানুষ হিসাবেই যাত্রারম্ভ করেছে এবং আজও সেভাবেই তা অব্যাহত রয়েছে। অতএব গুহামানব, বন্যমানব, আদিম মানব ইত্যাদি বলে অসভ্য যুগ থেকে সভ্য যুগে মানুষের উত্তরণ ঘটেছে বলে কিছু কিছু ঐতিহাসিক যেসব কথা শুনিয়ে থাকেন, তা অলীক কল্পনা ব্যতীত কিছুই নয়। সূচনা থেকে এযাবত এই দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় মানুষ কখনোই মানুষ ব্যতীত অন্য কিছু ছিল না। মানুষ বানর বা উল্লুকের উদ্বর্তিত রূপ বলে ঊনবিংশ শতাব্দীতে এসে চার্লস ডারউইন (১৮০৯-১৮৮২) যে ‘বিবর্...