সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

শরীরে আগুন লাগলে যা করা জরুরি


দুর্ঘটনা যেকোনো সময়ই ঘটতে পারে। কিন্তু দুর্ঘটনা পরবর্তী পরিস্থিতি সামাল দেয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যাতে রক্ষা করা যায় জানমাল। বিশেষ করে আগুনজনিত দুর্ঘটনা বয়ে আনতে পারে বড় বিপর্যয়। কিন্তু কিছু বিষয় জানা থাকলে পরিস্থিতি সামাল দেয়াটা অনেক সহজ হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেয়া তথ্যমতে, বড়দের ক্ষেত্রে শরীরের ১৫ শতাংশ এবং শিশুদের ক্ষেত্রে যদি শরীরের ১০ শতাংশ পুড়ে যায় তাহলে তা ঝুঁকিপূর্ণ বলে ধরা হয়। তবে খুব কম বয়সী শিশু বা নবজাতক এবং বয়স্কদের ক্ষেত্রে এই পরিমাপ সব সময় খাটে না। এসব এক্ষেত্রে ১০ কিংবা ১৫ ভাগের চেয়ে কম পুড়ে গেলেও অনেক সময় তা প্রাণঘাতী হতে পারে।
পোড়া অংশের পরিমাণ যত বেশি হবে মৃত্যুর আশঙ্কা তত বেড়ে যাবে। এছাড়া এটা বয়সের সাথে সম্পর্কযুক্ত। অর্থাৎ বয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে কম পরিমাণ পোড়াও প্রাণহানির কারণ হতে পারে।
শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি'র সহকারী অধ্যাপক ডা. শারমিন আক্তার সুমি বলেন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশের কম পোড়াটাও বিপদজনক।
যখন পোড়াটা অনেক গভীর হয়, রোগী যখন অনেক বেশি বয়স্ক থাকে কিংবা খুব কম বয়সী থাকে, রোগীর যদি অন্য কোন স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, অ্যাজমা থাকে, যারা অনেক মোটা থাকে, যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল থাকে, এসব ক্ষেত্রে পোড়ার পরিমাণ খুব বেশি না থাকলেও অবস্থা অনেক বেশি খারাপ হয়ে যায়।
মানবদেহকে ১০০ ভাগ ধরা হয়। এর মধ্যে ১৫ শতাংশের বেশি পুড়ে গেলে অবস্থা খারাপ হওয়া শুরু হয়। এটা ৩০ ভাগের বেশি হলে সেখানে এক্সটেনসিভ ট্রিটমেন্ট (বিশেষ চিকিৎসা) দরকার হয়।
শরীরের ৪০ ভাগের বেশি পুড়ে গেলে সেই রোগীকে ক্রিটিক্যাল বা সংকটাপন্ন বলে ধরা হয়। আর ৭০ ভাগের বেশি হলে ধরে নেয়া হয় যে তার বাঁচার আশা নেই বললেই চলে।

আগুন


আগুনে পোড়ার হিসাব কিভাবে হয়?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, পুড়ে যাওয়া পরিমাপ করতে পুরো দেহকে ১০০ ভাগ ধরা হয়। এরপর বিভিন্ন অংশকে আলাদা ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন, আঙুল খোলা রেখে পুরো হাতের তালু মিলে এক ভাগ ধরা হয়। পোড়া যদি ছোট আকারের হয় তাহলে তা পরিমাপের ক্ষেত্রে ওই অংশটি হাতের তালুর কতগুণ সেটা হিসাব করা হয়।
সংস্থাটির মতে, প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে মানুষের পুরো শরীরকে নয় শতাংশ হিসেবে বা ৯ এর গুণীতক ধরে ভাগ করে হিসাব করা হয়।
এবিষয়ে ডা. শারমিন আক্তার সুমি বলেন, প্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে হাতের আঙুল থেকে শুরু করে ঘাড় পর্যন্ত সামনের এবং পেছনের অংশ মিলে ৯ শতাংশ। আবার পায়ের সামনের অংশ ৯ শতাংশ এবং পেছনের অংশ ৯ শতাংশ। অর্থাৎ পুরো পা মিলে ১৮ শতাংশ ধরা হয়।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে এগুলো পরিমাপ করার আলাদা চার্ট আছে। সে অনুযায়ী এগুলো পরিমাপ করা হয়। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে এই হিসাবটি একটু আলাদা। শিশুদের মাথার সামনে এবং পেছনের অংশ মিলে ২০ শতাংশ ধরা হয়। কিন্তু প্রাপ্ত বয়স্কদের ক্ষেত্রে মাথার সামনে এবং পেছনের অংশ মিলে ৯ শতাংশ ধরা হয়।


কী ধরণের পোড়া কতটা মারাত্মক?

একটা জিনিস কতখানি গভীর হয়ে পুড়বে তা নির্ভর করে কতক্ষণ সময় ধরে আগুনের সংস্পর্শে থাকলে, কোন ধরনের আগুনে পুড়লো এবং যে জিনিসে পুড়লো সেটার তাপমাত্রা কত ছিল। এগুলো মিলে পোড়াকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। এগুলো হচ্ছে-

কন্টাক্ট বার্ন: এটা হচ্ছে কোন কিছুর সাথে লেগে পোড়া। তরল পদার্থ বা শক্ত পদার্থের সংস্পর্শে আসা। যেমন গরম পাতিল বা কয়েনে পোড়া।

ফ্লেম বার্ন: সরাসরি আগুনের সংস্পর্শে পোড়া। অর্থাৎ আগুন জামায় লাগলো বা গায়ে লাগলো।

কেমিকেল বার্ন: বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিকের সংস্পর্শে আসলে পুড়ে গেলে সেটাকে কেমিকেল বার্ন ধরা হয়।

বাংলাদেশে ফ্লেম বার্ন সবচেয়ে বেশি হয় বলে জানান ডা. শারমিন আক্তার সুমি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, গভীরতা বা মাত্রা অনুযায়ী পোড়া তিন ধরনের হয়।

ফার্স্ট ডিগ্রি বার্ন: এটি মূলত সূর্যের তাপের কারণে হয়। এতে চামড়া লাল হয়ে যেতে পারে, ব্যথা থাকতে পারে, কিন্তু ফোস্কা পড়ে না।

সেকেন্ড ডিগ্রি বার্ন: গরম কোন তরল পদার্থের সংস্পর্শে আসলে এ ধরণের পোড়া হতে পারে। এতে চামড়া লাল বা ধূসর হয়ে পুড়ে বা ঝলসে যায়।

থার্ড ডিগ্রি বার্ন: এতে চামড়া কালো হয়ে পুড়ে যায় এবং মারাত্মক আকার ধারণ করে। আগুন, বিদ্যুৎ বা বজ্রপাত, দীর্ঘ সময় গরম তরল বা ধাতব পদার্থের সংস্পর্শে আসলে এধরণের পোড়ার ঘটনা ঘটে।

শ্বাসনালী পোড়া খারাপ কেন?

অনেক সময় দেখা যায় যে, আগুনের সংস্পর্শে আসলে শ্বাসনালী পুরে যায়। এ ধরণের পোড়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানান ডা. শারমিন আক্তার সুমি।
পেট্রোল বা কোন দাহ্য পদার্থ দিয়ে যদি আগুন লাগানো হয়, কিংবা গ্যাস থেকে আগুন লাগলে বা বদ্ধ কোন জায়গায় আগুন লাগলে শ্বাসনালী পুড়ে যাওয়ার শঙ্কা সবচেয়ে বেশি থাকে।
তিনি বলেন, শ্বাসনালীর পোড়াটা সরাসরি ফুসফুসে প্রভাব সৃষ্টি করে বলে এই পোড়া সবচেয়ে মারাত্মক।
আমরা যে শ্বাস নেই সেটি একটি নালীর মাধ্যমে ফুসফুসে যায়। এই বাতাসের সাথে ছোট ছোট উপাদান থাকে যা খালি চোখে দেখা যায় না। এগুলো ফুসফুসে গিয়ে সংক্রমণ সৃষ্টি করে।
পরিবেশে বা বাতাসে যে মাইক্রোঅর্গানিজম থাকে সেগুলো চামড়া বা ত্বক ভেদ করে ঢুকতে পারে না। কিন্তু চামড়া পুরো গেলে সেগুলো সহজেই ফুসফুস এবং মাংসপেশিকে সংক্রমণ তৈরি করে। এই মাইক্রোঅর্গানিজমগুলো পোড়া শ্বাসনালীর ভেতর দিয়ে ফুসফুসে সংক্রমণ তৈরি করে। যার কারণে নিউমোনিয়া দেখা দেয়। এ কারণে এটি একটি বাড়তি ঝুঁকি তৈরি করে বলে জানান ডা. শারমিন আক্তার সুমি।

প্রাথমিক অবস্থায় কী কী ব্যবস্থা নেয়া যায়?

কেউ অগ্নিকাণ্ডের শিকার হলে সাথে সাথে কী কী ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে সে বিষয়ে চিকিৎসক এবং বিশেষজ্ঞরা বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। এছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ-এনএইচএস-ও কিছু পরামর্শের কথা উল্লেখ করেছে। এগুলো হচ্ছে-

১. প্রচুর পানি ঢালুন:

শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি'র সহকারী অধ্যাপক ডা. শারমিন আক্তার সুমি বলেন, আগুনে পোড়ার প্রথম আধাঘণ্টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এসময় রোগীর শরীরে যত বেশি সম্ভব পানি ঢালতে হবে। শুধু পানি ঢাললেই পোড়ার পরিমাণ কমিয়ে আনা যেতে পারে। যেখানে ২০ শতাংশ পুড়তো সেটাকে হয়তো ১৫ বা ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা যেতে পারে।
যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বহমান ঠাণ্ডা পানি দিয়ে পোড়া জায়গা অন্তত ২০ মিনিট ধরে ধুতে হবে। তবে বরফ, বরফ শীতল পানি কোন ধরণের ক্রিম ও তৈলাক্ত পদার্থ যেমন মাখন দেয়া যাবে না।

২. কাপড় ও গহনা খুলে ফেলুন:

কেউ অগ্নিকাণ্ডের শিকার হলে তার পরিহিত কাপড় ও গহনা যত দ্রুত সম্ভব খুলে ফেলতে হবে। শিশুদের ক্ষেত্রে ন্যাপি কিংবা ডায়াপার থাকলে সেটি খুলে ফেলতে হবে। কিন্তু পোড়া চামড়া বা পেশীর সাথে যদি কোনো ধাতব পদার্থ বা কাপড়ের টুকরো আটকে গিয়ে থাকে, তাহলে তা সরানোর চেষ্টা করা যাবে না। এক্ষেত্রে ক্ষত আরো বেশি বাড়ার আশঙ্কা থাকে।
পানি ঢালার পর রোগীর শরীর গরম রাখার চেষ্টা করতে হবে যাতে হাইপোথারমিয়া না হয়। সেক্ষেত্রে কম্বল দিয়ে তাকে জড়িয়ে নেয়া যেতে পারে। তবে শরীরের যে অংশ পুড়ে গেছে সেখানে যাতে কোন ধরণের কাপড় না থাকে সেটি খেয়াল রাখতে হবে।

৩. যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিতে হবে:

আগুনে পোড়োর পর প্রথম ২৪ ঘণ্টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে মধ্যে হাসপাতালে নেয়া গেলে রোগীর মৃত্যু ঝুঁকি অনেকাংশেই কমিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
ডা. শারমিন আক্তার সুমি বলেন, প্রথমত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে নেয়া হলে রোগীর প্রয়োজন অনুযায়ী তাকে ২০-৩০ লিটার পর্যন্ত স্যালাইন দেয়া যায়। কিন্তু এর চেয়ে বেশি সময় অতিবাহিত হয়ে গেলে ৩-৪ লিটারের বেশি দেয়া সম্ভব নয়। ফলে তার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
প্রথম ২৪ ঘণ্টায় স্যালাইন দেয়ার কারণে যে উপকার পাওয়া যায় পরে আর সেটি পাওয়া যায় না। এজন্য এই ২৪ ঘণ্টাকে পোড়া রোগীর জন্য গোল্ডেন আওয়ার বলা হয়।

৪. টুথপেস্ট, লবণ, ডিমের সাদা অংশ দেয়া যাবে না:

পোড়া রোগীকে তার ক্ষত স্থানের উপর টুথপেস্ট, লবণ বা ডিমের সাদা অংশ দেয়া যাবে না। এটি প্রাথমিকভাবে জীবাণুমুক্ত থাকলেও পরবর্তীতে এটাকে সংক্রমণের দিকে ঠেলে দেয়। হাসপাতালে নেয়ার পর এই জিনিসগুলোকে পরিষ্কার করা হয়। আর তখন এগুলো জমাট বেঁধে থাকে বলে চামড়া উঠে আসার শঙ্কা থাকে। অর্থাৎ তার ক্ষত আরও গভীর হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
যদি রোগীর মুখ কিংবা চোখ পুড়ে যায় তাহলে রোগীকে যতক্ষণ সম্ভব সোজা করে বসিয়ে রাখার চেষ্টা করতে হবে। এতে ফোস্কা পড়া বা ফুলে যাওয়া কমে যায়।

৫. বেশি করে তরল খাওয়াতে হবে:

পোড়া রোগীকে স্যালাইন দেয়া সম্ভব না হলে মুখে অন্তত স্যালাইন, ডাবের পানি বা তরল জাতীয় খাবার বেশি করে খাওয়াতে হবে। এছাড়া ক্যালরি ও প্রোটিন জাতীয় খাবার যেমন ডিম বা মুরগি খাওয়ানোর পরামর্শ দেয়া হয়। 


সূত্রঃ ঢাকাটাইমস


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আস্তাগফিরুল্লাহ! বলার ফজিলত নিয়ে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহঃ) এর চমৎকার গল্প অবলম্বনে।

হোম   আল-কুরআন   আল-হাদিস   সংবাদপত্র   চাকরি   পরীক্ষার রেজাল্ট   সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আলহামদুলিল্লাহ!  শুরুতেই বলে রাখি, ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহঃ) ছিলেন ইমাম বুখারী (রহঃ) এর ওস্তাদ। তিনি ১০ লক্ষ হাদিস মুখস্ত রেখেছিলেন। তিনি যে হাদিস গ্রন্থ লিখেছিলেন তার নাম মুসনাদে আহমদ। সেখানে তিনি প্রায় ৪০ হাজার হাদিস লিপিবদ্ধ করেছিলেন। একদিনের_ঘটনা!  ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহঃ) বৃদ্ধ মানুষটি হতভম্ব হয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলেন মসজিদের সামনে! এত রাতে কোন মানুষজনের ঘরে গিয়ে তাঁদের কষ্টের কারণ হতে চান নি তিনি। সেকারণেই চেয়েছিলেন মসজিদেই কাটিয়ে দিবেন রাতটুকু। নফল ছালাত আর কিছুটা ঘুমিয়ে দিব্যি রাত কাটিয়ে দেয়া যেত। কিন্তু বাধ সাধলেন মসজিদের খাদেম। কোন এক অজানা কারণে তাঁকে পছন্দ করলেন না খাদেম। স্রেফ মানা করে দিলেন খাদেম– মসজিদে রাত কাটানো যাবে না। মসজিদের সামনে দাঁড়িয়ে খাদেম সাহেব সেই কথাটি-ই বেশ উঁচু গলায় কথা বলে দিলেন বৃদ্ধকে। মসজিদ সাথে লাগানো রুটির দোকানে মধ্য বয়স্ক একজন বিশাল তন্দুরে রুটি বানাচ্ছেন। খাদেমের চড়া গলা তাঁর কানে পর্যন্ত গেল। রুটি বান...

খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ)।পর্ব- ৪

  উমর (রাঃ) এর যুগ (৬৩৪–৬৪২) খালিদ (রাঃ) এর পদচ্যুতিঃ ৬৩৪ সালের ২২ আগস্ট আবু বকর মৃত্যুবরণ করেন। তিনি উমর (রাঃ) কে নিজের উত্তরসূরি নিয়োগ দিয়ে গিয়েছিলেন। খলিফা হওয়ার পর উমর খালিদকে পদচ্যুত করে আবু উবাইদা (রাঃ) কে সেনাপতি নিয়োগ করেন। খালিদ (রাঃ) অপরাজেয় হওয়ায় অনেক মুসলিম তার কারণে যুদ্ধে বিজয় অর্জিত হচ্ছে বলে বিশ্বাস করতে শুরু করে। এই ব্যাপারে উমর (রাঃ) বলেছিলেন :"আমি খালিদ বিন ওয়ালিদকে আমার ক্রোধ বা তার দায়িত্বহীনতার কারণে অব্যাহতি দিই নি, এর কারণ ছিল আমি লোকদের জানাতে চাইছিলাম যে বিজয় আল্লাহর তরফ থেকে আসে।" খালিদ (রাঃ)  খলিফার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে নির্দেশ অনুযায়ী আবু উবাইদা (রাঃ) এর অধীনে দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। তিনি বলেছিলেন : " যদি আবু বকর মৃত্যুবরণ করেন আর উমর খলিফা হন, তবে আমরা শুনব এবং মানব  " আবু উবাইদা (রাঃ) এর নেতৃত্বে এরপর সিরিয়া অভিযান চলতে থাকে। আবু উবাইদা খালিদের গুণগ্রাহী ছিলেন। তিনি খালিদ (রাঃ) কে অশ্বারোহী বাহিনীর নেতৃত্ব প্রদান করেন এবং নিজের সামরিক উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেন। মধ্য লেভান...

১. হযরত আদম (আঃ) পর্বঃ-১

বিশ্ব ইতিহাসে প্রথম মানুষ ও প্রথম নবী হিসাবে আল্লাহ পাক আদম (আলাইহিস সালাম)-কে নিজ দু’হাত দ্বারা সরাসরি সৃষ্টি করেন (ছোয়াদ ৩৮/৭৫)। মাটির সকল উপাদানের সার-নির্যাস একত্রিত করে আঠালো ও পোড়ামাটির ন্যায় শুষ্ক মাটির তৈরী সুন্দরতম অবয়বে রূহ ফুঁকে দিয়ে আল্লাহ আদমকে সৃষ্টি করেছেন।[1] অতঃপর আদমের পাঁজর থেকে তাঁর স্ত্রী হাওয়াকে সৃষ্টি করেন।[2] আর এ কারণেই স্ত্রী জাতি স্বভাবগত ভাবেই পুরুষ জাতির অনুগামী ও পরস্পরের প্রতি আকৃষ্ট। অতঃপর স্বামী-স্ত্রীর মাধ্যমে যুগ যুগ ধরে একই নিয়মে মানববংশ বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে। কুরআন-এর বর্ণনা অনুযায়ী প্রথম দিন থেকেই মানুষ পূর্ণ চেতনা ও জ্ঞান সম্পন্ন সভ্য মানুষ হিসাবেই যাত্রারম্ভ করেছে এবং আজও সেভাবেই তা অব্যাহত রয়েছে। অতএব গুহামানব, বন্যমানব, আদিম মানব ইত্যাদি বলে অসভ্য যুগ থেকে সভ্য যুগে মানুষের উত্তরণ ঘটেছে বলে কিছু কিছু ঐতিহাসিক যেসব কথা শুনিয়ে থাকেন, তা অলীক কল্পনা ব্যতীত কিছুই নয়। সূচনা থেকে এযাবত এই দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় মানুষ কখনোই মানুষ ব্যতীত অন্য কিছু ছিল না। মানুষ বানর বা উল্লুকের উদ্বর্তিত রূপ বলে ঊনবিংশ শতাব্দীতে এসে চার্লস ডারউইন (১৮০৯-১৮৮২) যে ‘বিবর্...