সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বুরুন্ডিতে ইসলাম ও মুসলমান

আফ্রিকা মহাদেশের মধ্যভাগে ও গ্রেট আফ্রিকান জলরাশির (Great African Lakes) ধারে অবস্থিত একটি ছোট্ট দেশ বুরুন্ডি প্রজাতন্ত্র (Burundi)।
 উত্তরে রুয়ান্ডা, পূর্ব-দক্ষিণে তানজানিয়া ও পশ্চিমে কিছুটা কঙ্গোর সীমানা বিস্তৃত। বাকি অংশজুড়ে রয়েছে তাঙ্গানিকা জলাধার (Lake Tanganyika)। দেশের আয়তন প্রায় ২৭ হাজার ৮৩০ কিলোমিটার। রাষ্ট্রীয় ভাষা কিরোন্দি ও ফ্রেঞ্চ। বুরুন্ডির রাজধানী ও প্রধান শহর বাজুম্বুরা। মুদ্রার নাম ফ্রাঙ্ক।


বুরুন্ডিতে ইসলাম ও মুসলমান


১৮৯৭ সালে জার্মানি বর্তমান বুরুন্ডি ও রুয়ান্ডায় উপনিবেশ স্থাপন করে। ১৯১৬ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে বেলজিয়াম দখল করে নেয়। ১৯২৩ সালে রুয়ান্ডাও বেলজিয়ামের দখলে চলে আসে। পরবর্তী সময় ১৯৬২ সালে বুরুন্ডি ও রুয়ান্ডা আলাদা দুটি রাষ্ট্রে পরিণত হয়।


বুরুন্ডির বেশির ভাগ নাগরিক খ্রিস্টান। তবে মুসলমানের সংখ্যাও তুলনামূলকভাবে অনেক। পৃথিবীর প্রতিটি দেশের মতো বুরুন্ডিতেও ইসলামের ইতিহাস ও ঐতিহ্য রয়েছে। রয়েছে ধর্মীয় অবস্থান ও আখ্যান।


বুরুন্ডিতে ইসলামের আগমন : পশ্চিম আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন মুসলিম দাঈ ও ব্যবসায়ীর পথ ধরেই বুরুন্ডিতে ইসলামের আগমন হয়েছে। জেনজিবার শাসনামলে এ অঞ্চলে দাওয়াতের মেহনত প্রভূত উন্নতি লাভ করেছে। তখনকার বণিক দাঈরা মধ্য-আফ্রিকার পশ্চিমাঞ্চলে দাওয়াতের মেহনতের জন্য স্বতন্ত্র মারকাজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং মুসলিম দাঈদের বিরাট একটি অংশ তানজানিয়ার রাজধানীতে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেছিল। তারা তানজানিয়া প্রণালিতে নৌকার মাধ্যমে ব্যবসায়িক কাজকর্মের জন্য বুরুন্ডির ‘রাওদাহ’ নামক স্থানে অবস্থান গড়ে তোলে। স্থানটি এখন পর্যন্ত বন্দরগাহ নামে প্রসিদ্ধ। এর পরিপ্রেক্ষিতে মুসলমানরা সে অঞ্চলের শাসকদের সঙ্গে কিছু চুক্তি করে। এরপর তারা তানজানিয়ার উত্তরাঞ্চলে (আজ বুরুন্ডি নামে বিশ্বদরবারে পরিচিত) ইসলামের প্রচার-প্রসারে আত্মনিয়োগ করে। তৎকালীন মুসলিম দাঈদের ইসলাম প্রচারের কার্যক্রম কঙ্গো (পূর্ব নাম জায়ার) পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল। কিন্তু আকস্মিকভাবে বেলজিয়াম, জার্মানি ও ব্রিটেন সেখানে উপনিবেশবাদের জাল বিছিয়ে দেয় এবং দাওয়াতের কাজে বিভিন্নভাবে বাধা সৃষ্টি করে। উপরন্তু এ অঞ্চল নিজেদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা করে নেয়। ফলে বুরুন্ডি জার্মানির ভাগে পড়ে এবং সাম্রাজ্যের ছত্রচ্ছায়ায় ইসলামী দাওয়াত ও তাবলিগের বদলে খ্রিস্টান মিশনারির তৎপরতা দ্রুতগতিতে বাড়তে থাকে। ক্রমান্বয়ে খ্রিস্টানরা মুসলমানদের ওপর চড়াও হতে শুরু করে। মুসলমানদের সব ধরনের দাওয়াতি কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। (ওসি আহমদ নদভি, বুরুন্ডি মে ইসলাম আওর মুসলমান)

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরপর বেলজিয়াম বুরুন্ডি দখল করে নেয়, তখন এখানকার মুসলমানরা অপ্রত্যাশিতভাবে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন। আশপাশের আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে মেলামেশা, এমনকি দু-তিনজন মুসলমান একসঙ্গে হওয়ার ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। মুসলমানদের নিজস্ব জায়গাগুলো জোরপূর্বক দখল করে খ্রিস্টান মিশনারিকে দিয়ে দেওয়া হয়। শিক্ষাক্ষেত্রেও মুসলমানরা বিভিন্ন ধরাবাঁধার শিকার হয়। তাদের সন্তানদের খ্রিস্টান মিশনারি স্কুলে পাঠাতে বাধ্য হয়। কিন্তু মুসলমানরা নিজেদের ছেলে-মেয়েদের খ্রিস্টান মিশনারির আওতাধীন পরিচালিত স্কুলে পাঠাতে সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করে এবং খ্রিস্টানদের থেকে শিক্ষা গ্রহণের পরিবর্তে মানবেতর জীবনযাপনকে প্রাধান্য দেয়। সে কারণে মুসলমানরা অর্থনৈতিকভাবে বেশ কোণঠাসা ও দুর্বল হয়ে পড়ে। (পাক্ষিক তামিরে হায়াত, জুলাই ২০১৬ সংখ্যা, লখনউ থেকে প্রকাশিত)

যেসব অঞ্চলে মুসলমানরা বসবাস করে : বুরুন্ডির রাজধানী বুজুম্বুরায় মুসলমানরা ঐক্যবদ্ধভাবে একসঙ্গে থাকে। অন্যদিকে বুরুন্ডির ‘হুতু’ অঞ্চলে মুসলমানের সংখ্যা ব্যাপক হারে বেড়ে চলছে। ‘হুতু’ বুরুন্ডির সবচেয়ে বড় অঞ্চল। যার চার ভাগের এক ভাগ মুসলমানদের। এ ছাড়া বুরুন্ডির বেশির ভাগ এলাকায় প্রচুরসংখ্যক বাঙালি, পাকিস্তানি ও ভারতীয় ও আরব মুসলমান বসবাস করে। (সূত্র : আরব এনসাইক্লোপিডিয়া-আল মাওসুআতুল আরাবিয়্যাহ)

বিভিন্ন ইসলামী কর্মতৎপরতা : বুরুন্ডিতে মুসলমানদের বিভিন্ন সাহায্য-সহযোগিতার জন্য কিছু মুসলিম সংস্থা রয়েছে। যেগুলোর মাধ্যমে গত কয়েক বছরে বেশ গুরুত্বপূর্ণ কাজ হয়েছে। প্রচুরসংখ্যক অমুসলিম ইসলাম গ্রহণ করেছে। তার মধ্যে ‘আল-জামইয়্যাতুল ইসলামিয়্যা’ অন্যতম। এটি ১৯৪৩ সালে বেলজিয়াম উপনিবেশবাদের সময় প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। বেলজিয়াম কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও বহু চড়াই-উতরাই পেরিয়ে সংস্থাটি টিকে ছিল। এ ছাড়া ‘আল-জামইয়্যাতুল আফ্রিকিয়্যা’, ‘আল-জামইয়্যাতুল আরাবিয়্যাতুল ইসলামিয়্যাহ’, ‘জামইয়্যাতুদ দাওয়াতিল ইসলামিয়্যাহ’র কার্যক্রম বেশ ক্রিয়াশীল। বর্তমানে ‘আর-রাবেতাতুল ইসলামিয়্যা’ও সক্রিয় বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে। (ইসলাম ওয়েব ডটকম)

বুরুন্ডিতে মসজিদ-মাদরাসা ও ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্র  : রাজধানী বুজুম্বুরায় সাতটি মসজিদ রয়েছে। তার মধ্যে একটি বিশালায়তনের। এ ছাড়া মুসলিম এলাকাগুলোতে মসজিদের উপস্থিতি রয়েছে।

বুরুন্ডির মুসলমানরা ছেলেসন্তানদের ধর্মীয় শিক্ষার জন্য বেশ কিছু মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেছে। ‘মাদরাসাতুত তাওহিদ’ নামে রাজধানী বুজুম্বুরায় বড়সড় একটি প্রাইভেট মাদরাসা রয়েছে। এর প্রতিষ্ঠাতা বুজুম্বুরার প্রধান মসজিদের ইমাম ও খতিব শায়খ ইয়াহইয়া। রাজধানীতে আরো কিছু মাদরাসা আছে। কিছুদিন আগে দেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয় মাদরাসাগুলো নিজেদের আওতাধীন করে নেয়। ফলে শিক্ষাক্রমের পরিবর্তন, শিক্ষকদের সংখ্যা বৃদ্ধিকরণ ও অনূদিত ইসলামী বইগুলোর বেশ প্রয়োজন দেখা দেয়। এ ক্ষেত্রে রাবেতাতুল আলমিল ইসলামী অনেক সহযোগিতা করেছে। (পাক্ষিক তামিরে হায়াত, জুলাই ২০১৬ সংখ্যা, লখনউ থেকে প্রকাশিত)

বুরুন্ডির মুসলমানদের সব সময় খ্রিস্টান মিশনারিদের মাধ্যমে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। মিশনারিগুলোকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ও বহির্বিশ্ব থেকে বিভিন্ন প্রকারের ব্যাপক সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়। ফলে মুসলমানদের তুলনায় তারা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে। বিভিন্ন অসুবিধা ও সমস্যার সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও মুসলমানরা নিজেদের আকিদা-বিশ্বাসের ওপর পুরোপুরি অটল। সংগঠন ও মতানৈক্যের আধিক্যও মুসলমানদের ঐক্যব্যবস্থা দুর্বল করে রেখেছে। আবার বংশীয় বৈপরীত্য ও দ্বন্দ্ব বেশ প্রকট।

কয়েকটি সংগঠন মিলে রাজধানীতে একটি ইসলামিক সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেছে। তারা আরো অন্যান্য অঞ্চলেও ইসলামিক সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেছে। ইসলামিক সেন্টারগুলোতে নারীদের শিক্ষা-দীক্ষা, নৈতিকতাচর্চা ও নিন্দনীয় কার্যকলাপ থেকে রক্ষা করার জন্য নিয়মতান্ত্রিকভাবে বিভিন্ন কোর্সের আয়োজন করা হয়।

(সংগ্রহীত)

মুসলমানদের ইতিহাস

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

গরমে চুলকানি থেকে মুক্ত থাকার কার্যকরী উপায়।

  গরমের দিনে তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চুলকানির সমস্যা অনেকেরই বেড়ে যায়। ঘাম, আর্দ্রতা, ত্বকের সংবেদনশীলতা কিংবা ফাঙ্গাল ইনফেকশনের কারণে এই অস্বস্তি দেখা দিতে পারে। তবে কিছু সচেতনতা ও ঘরোয়া পদ্ধতি মেনে চললে গরমেও চুলকানি থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব। চলুন জেনে নেওয়া যাক বিস্তারিত: গরমে চুলকানির প্রধান কারণঃ ১. ঘাম ও ময়লা জমা: ঘামের সাথে ময়লা ও ব্যাকটেরিয়া মিশে ত্বকে জমে, যা রোমকূপ বন্ধ করে ফুসকুড়ি বা চুলকানি সৃষ্টি করে।   ২. শুষ্ক ত্বক: গরমে পানিশূন্যতা ও এসি/ফ্যানের কারণে ত্বক শুষ্ক হয়ে চুলকায়।   ৩. অ্যালার্জি: গরমে ধুলোবালি, পরাগরেণু বা সিনথেটিক কাপড়ের সংস্পর্শে অ্যালার্জিজনিত চুলকানি হতে পারে।   ৪. মশা-মাছির কামড়: গরমে মশা-পোকা বেশি সক্রিয় হয়, তাদের কামড়ে ত্বকে জ্বালাপোড়া ও চুলকানি দেখা দেয়।   চুলকানি প্রতিরোধের ১০টি টিপসঃ ১. পরিষ্কার থাকুন: দিনে অন্তত দুবার হালকা গরম পানিতে গোসল করুন। ঘাম ও ময়লা দূর করতে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল সাবান ব্যবহার করুন।   ২. হালকা সুতির পোশাক: টাইট বা সিনথেটিক কাপড় এড়িয়ে সুতি/লিনেনের ঢিলেঢালা পোশাক পরুন। এ...

Write a paragraph on "The consequences of climate change in Bangladesh"

  The consequences of climate change in Bangladesh Climate change poses severe threats to Bangladesh, a low-lying delta nation highly vulnerable to environmental shifts. Rising sea levels exacerbate coastal erosion, displacing communities and submerging arable land, while saltwater intrusion contaminates freshwater sources and soil, crippling agriculture—a lifeline for millions. Intensified cyclones, such as Cyclone Sidr and Aila, and erratic monsoon patterns cause devastating floods and riverbank erosion, destroying homes, infrastructure, and livelihoods. By 2050, up to 18 million people could be displaced due to climate impacts. The Sundarbans, a critical mangrove ecosystem and natural storm barrier, faces degradation, threatening biodiversity and coastal resilience. Concurrently, shifting temperatures and rainfall disrupt crop yields, heightening food insecurity and poverty. Health risks from waterborne diseases and heatwaves further strain vulnerable populations. With limited r...

Write a paragraph about 'Three Zero Theory'

Three Zero Theory  Muhammad Yunus's Three Zero Theory presents a revolutionary approach to sustainable development through three ambitious goals: eliminating poverty, unemployment, and net carbon emissions. The Nobel laureate and microfinance pioneer argues that these interconnected challenges must be addressed simultaneously to create a just and sustainable world. His first zero - zero poverty - builds on his groundbreaking microcredit model, empowering the poor through access to capital and social businesses. The second zero - zero unemployment - promotes an entrepreneurial economy where everyone can become a job creator rather than a job seeker. The final zero - zero net carbon emissions - calls for environmentally responsible business practices to combat climate change. This holistic framework reimagines capitalism by prioritizing social welfare over profit maximization, offering practical solutions to global crises. Yunus's theory has gained international recognition as a ...