সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আইভরি কোস্টের হারানো মুসলিম শাসন


পশ্চিম আফ্রিকার অন্যতম দেশ আইভরি কোস্ট। আরবিতে দেশটির নাম ‘সাহিলুল আজ’। যার অর্থ হলো, হস্তীদন্তের উপকূল। দেশটির পূর্বে ঘানা, পশ্চিমে গিনি ও লাইবেরিয়া, উত্তরে মালি ও বুরকিনা ফাসো। আর দক্ষিণে গিনি উপসাগর ও আটলান্টিক মহাসাগর অবস্থিত। রাজধানীর নাম ইয়ামুসুক্রো। অর্থনৈতিক কেন্দ্রভূমি আবিদজান শহর। সরকারি ভাষা ফরাসি। সিআইএ দি ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুকের তথ্য মতে, মোট জনসংখ্যা ২ কোটি ৭৪ লাখ এক হাজার ৮৬ জন (জুলাই ২০২০)। এবং ৪২ দশমিক ৯ শতাংশ মুসলিম। আয়তন তিন লাখ ২২ হাজার ৪৬২ কিমি। আইভরি কোস্টের নামকরণের ব্যাপারে বলা হয়, প্রাচীনকালে আফ্রিকার ব্যবসায়ীরা হাতির দাঁত একত্র করে উপকূলে এসে বিক্রি করত। তা থেকেই ‘আইভরি কোস্ট’ বা ‘হাতির দাঁতের উপকূল’ নামে পরিচিতি লাভ করে।

আইভরি কোস্ট


১৯৬০ সালের ৭ আগস্ট দেশটি ফ্রান্স থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। তবে ফ্রান্সের সঙ্গে দেশটি এখনো বিভিন্ন চুক্তিতে আবদ্ধ।

আইভরি কোস্টে নানা উপায়ে ইসলামের আগমন হয়। মুসলিম ব্যবসায়ীদের পদচারণ ছিল আফ্রিকার এ অঞ্চলে। ব্যবসা-বাণিজ্যে মুসলিম বণিকদের সদাচার ও সততা দেখে মুগ্ধ হয় স্থানীয়রা। মুসলিমদের মধ্যে কোরআন ও হাদিসের পাঠ ও কর্মপন্থায় এর অনুসরণ তাদের অন্তরে দাগ কাটে। ফলে তারা ধীরে ধীরে আগ্রহী হয়ে ওঠে ইসলামের প্রতি। পৌত্তলিক গোত্রগুলোতে মুসলিমদের আদর্শ ও শিক্ষার প্রভাব বাড়তে থাকে।

বিশেষ একটি কারণে আইভরি কোস্টে ইসলামের ব্যাপক প্রচার-প্রসার হয়। ১০২৫ খ্রিস্টাব্দে আইভরি কোস্টের প্রসিদ্ধ পরিবার মান্ডিংকা (Mandinka) গোত্রের নেতারা ইসলাম গ্রহণ করেন। আইভরি কোস্টে ইসলাম প্রচারে তাঁদের ব্যাপক ভূমিকা আছে। মান্ডিংকা গোত্রটি পশ্চিম আফ্রিকার বৃহৎ ও প্রাচীন একটি পরিবার। পশ্চিম ও দক্ষিণে আটলান্টিক মহাসাগরের উপকূলে এবং নাইজার নদীর আশপাশসহ পশ্চিম ও উত্তরের মরুভূমিতে ছড়িয়ে আছে গোত্রটির সদস্যরা। বর্তমানের সুবিশাল আফ্রিকার দেশগুলোতে এই গোত্রটির বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা ছড়ানো।

১০৫০ সালে আইভরি কোস্টের উত্তরাঞ্চলে মান্ডিংকা বংশের মুসলিম গোত্রগুলো ঘানা সাম্রাজ্য থেকে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য প্রচেষ্টা শুরু করে। দীর্ঘ ২০ বছর পর ১০৭৬ সালে দেশটির দক্ষিণের মুরাবিত নেতা আবু বকর বিন উমরের নেতৃত্বে স্বাধীনতা অর্জন করে। এর পর থেকে সুদীর্ঘকাল ধরে আফ্রিকার এই অঞ্চলটি মুসলিম শাসনাধীন ছিল। সাম্রাজ্যের সব ক্ষেত্রে  ইসলামী আইন ও নীতিমালার বাস্তবায়ন ছিল।

অতঃপর ১৫ শতাব্দীর শেষলগ্নে পশ্চিম আফ্রিকার উপকূলে ইউরোপের অত্যাধুনিক নৌবহরের যাত্রা শুরু হয়। ১৪৯২ সালে আমেরিকা আবিষ্কারের পর উপকূলবর্তী এই অঞ্চল থেকে ব্যাপকভাবে নারী, শিশু, তরুণ-তরুণীদের লুণ্ঠন করা শুরু হয়। অত্যন্ত ঘৃণ্য পন্থায় স্থানীয়দের বন্দি করে আমেরিকায় তাদের দাস-দাসী হিসেবে বিক্রি করা হয়। ১৮৪৮ সালে দাস প্রথার বিলুপ্তি পর্যন্ত ‘মানব লুণ্ঠন ও পাচার’ অব্যাহত থাকে। হত্যা, লুণ্ঠন ও লুটতরাজের কারণে মুসলিম শাসক ও জনগণের মধ্যে চরম অস্থিরতা বিরাজ করে। ১৮৬১ সালে মান্ডিংকার লোকদের সাহায্যে আফ্রিকার বিখ্যাত বীর শাসক সামোরি তুরে ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা করে একটি সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন। এ সময় সামোরির নেতৃত্বে আইভরি কোস্টের মুসলিমরা দীর্ঘ সংগ্রাম করে। কিন্তু ১৮৯৮ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ফ্রান্স সেনাবাহিনীর হাতে সামোরি বন্দি হন এবং ১৯০০ সালে মৃত্যুবরণ করেন। অতঃপর ফ্রান্সের শাসনাধীন হয় আইভরি কোস্টসহ আফ্রিকার বিশাল অঞ্চল। আর অস্থিরতা ও যুদ্ধ-বিগ্রহে ইসলামী সভ্যতা ও সংস্কৃতির পরিসমাপ্তি ঘটে। বিশৃঙ্খলা ও স্থবিরতা আজও সেখানে বিরাজ করছে।

তথ্যসূত্র : আল মাআরিফা ও দাওয়া

মুসলমানদের ইতিহাস

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আস্তাগফিরুল্লাহ! বলার ফজিলত নিয়ে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহঃ) এর চমৎকার গল্প অবলম্বনে।

হোম   আল-কুরআন   আল-হাদিস   সংবাদপত্র   চাকরি   পরীক্ষার রেজাল্ট   সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আলহামদুলিল্লাহ!  শুরুতেই বলে রাখি, ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহঃ) ছিলেন ইমাম বুখারী (রহঃ) এর ওস্তাদ। তিনি ১০ লক্ষ হাদিস মুখস্ত রেখেছিলেন। তিনি যে হাদিস গ্রন্থ লিখেছিলেন তার নাম মুসনাদে আহমদ। সেখানে তিনি প্রায় ৪০ হাজার হাদিস লিপিবদ্ধ করেছিলেন। একদিনের_ঘটনা!  ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহঃ) বৃদ্ধ মানুষটি হতভম্ব হয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলেন মসজিদের সামনে! এত রাতে কোন মানুষজনের ঘরে গিয়ে তাঁদের কষ্টের কারণ হতে চান নি তিনি। সেকারণেই চেয়েছিলেন মসজিদেই কাটিয়ে দিবেন রাতটুকু। নফল ছালাত আর কিছুটা ঘুমিয়ে দিব্যি রাত কাটিয়ে দেয়া যেত। কিন্তু বাধ সাধলেন মসজিদের খাদেম। কোন এক অজানা কারণে তাঁকে পছন্দ করলেন না খাদেম। স্রেফ মানা করে দিলেন খাদেম– মসজিদে রাত কাটানো যাবে না। মসজিদের সামনে দাঁড়িয়ে খাদেম সাহেব সেই কথাটি-ই বেশ উঁচু গলায় কথা বলে দিলেন বৃদ্ধকে। মসজিদ সাথে লাগানো রুটির দোকানে মধ্য বয়স্ক একজন বিশাল তন্দুরে রুটি বানাচ্ছেন। খাদেমের চড়া গলা তাঁর কানে পর্যন্ত গেল। রুটি বান...

খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ)।পর্ব- ৪

  উমর (রাঃ) এর যুগ (৬৩৪–৬৪২) খালিদ (রাঃ) এর পদচ্যুতিঃ ৬৩৪ সালের ২২ আগস্ট আবু বকর মৃত্যুবরণ করেন। তিনি উমর (রাঃ) কে নিজের উত্তরসূরি নিয়োগ দিয়ে গিয়েছিলেন। খলিফা হওয়ার পর উমর খালিদকে পদচ্যুত করে আবু উবাইদা (রাঃ) কে সেনাপতি নিয়োগ করেন। খালিদ (রাঃ) অপরাজেয় হওয়ায় অনেক মুসলিম তার কারণে যুদ্ধে বিজয় অর্জিত হচ্ছে বলে বিশ্বাস করতে শুরু করে। এই ব্যাপারে উমর (রাঃ) বলেছিলেন :"আমি খালিদ বিন ওয়ালিদকে আমার ক্রোধ বা তার দায়িত্বহীনতার কারণে অব্যাহতি দিই নি, এর কারণ ছিল আমি লোকদের জানাতে চাইছিলাম যে বিজয় আল্লাহর তরফ থেকে আসে।" খালিদ (রাঃ)  খলিফার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে নির্দেশ অনুযায়ী আবু উবাইদা (রাঃ) এর অধীনে দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। তিনি বলেছিলেন : " যদি আবু বকর মৃত্যুবরণ করেন আর উমর খলিফা হন, তবে আমরা শুনব এবং মানব  " আবু উবাইদা (রাঃ) এর নেতৃত্বে এরপর সিরিয়া অভিযান চলতে থাকে। আবু উবাইদা খালিদের গুণগ্রাহী ছিলেন। তিনি খালিদ (রাঃ) কে অশ্বারোহী বাহিনীর নেতৃত্ব প্রদান করেন এবং নিজের সামরিক উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেন। মধ্য লেভান...

১. হযরত আদম (আঃ) পর্বঃ-১

বিশ্ব ইতিহাসে প্রথম মানুষ ও প্রথম নবী হিসাবে আল্লাহ পাক আদম (আলাইহিস সালাম)-কে নিজ দু’হাত দ্বারা সরাসরি সৃষ্টি করেন (ছোয়াদ ৩৮/৭৫)। মাটির সকল উপাদানের সার-নির্যাস একত্রিত করে আঠালো ও পোড়ামাটির ন্যায় শুষ্ক মাটির তৈরী সুন্দরতম অবয়বে রূহ ফুঁকে দিয়ে আল্লাহ আদমকে সৃষ্টি করেছেন।[1] অতঃপর আদমের পাঁজর থেকে তাঁর স্ত্রী হাওয়াকে সৃষ্টি করেন।[2] আর এ কারণেই স্ত্রী জাতি স্বভাবগত ভাবেই পুরুষ জাতির অনুগামী ও পরস্পরের প্রতি আকৃষ্ট। অতঃপর স্বামী-স্ত্রীর মাধ্যমে যুগ যুগ ধরে একই নিয়মে মানববংশ বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে। কুরআন-এর বর্ণনা অনুযায়ী প্রথম দিন থেকেই মানুষ পূর্ণ চেতনা ও জ্ঞান সম্পন্ন সভ্য মানুষ হিসাবেই যাত্রারম্ভ করেছে এবং আজও সেভাবেই তা অব্যাহত রয়েছে। অতএব গুহামানব, বন্যমানব, আদিম মানব ইত্যাদি বলে অসভ্য যুগ থেকে সভ্য যুগে মানুষের উত্তরণ ঘটেছে বলে কিছু কিছু ঐতিহাসিক যেসব কথা শুনিয়ে থাকেন, তা অলীক কল্পনা ব্যতীত কিছুই নয়। সূচনা থেকে এযাবত এই দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় মানুষ কখনোই মানুষ ব্যতীত অন্য কিছু ছিল না। মানুষ বানর বা উল্লুকের উদ্বর্তিত রূপ বলে ঊনবিংশ শতাব্দীতে এসে চার্লস ডারউইন (১৮০৯-১৮৮২) যে ‘বিবর্...