সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

হযরত আদম (আঃ) পর্বঃ-৩


আদমের অবতরণ স্থল

আদম ও হাওয়াকে আসমানে অবস্থিত জান্নাত থেকে নামিয়ে দুনিয়ায় কোথায় রাখা হয়েছিল, সে বিষয়ে মতভেদ রয়েছে। যেমন বলা হয়েছে আদমকে সরনদীপে (শ্রীলংকা) ও হাওয়াকে জেদ্দায় (সঊদী আরব) এবং ইবলীসকে বছরায় (ইরাক) ও ইবলাসের জান্নাতে ঢোকার কথিত বাহন সাপকে ইস্ফাহানে (ইরান) নামিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কেউ বলেছেন, আদমকে মক্কার ছাফা পাহাড়ে এবং হাওয়াকে মারওয়া পাহাড়ে নামানো হয়েছিল। এছাড়া আরও বক্তব্য এসেছে। তবে যেহেতু কুরআন ও ছহীহ হাদীছে এ বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলা হয়নি, সেকারণ এ বিষয়ে আমাদের চুপ থাকাই শ্রেয়।


 ‘আহ্দে আলাস্ত্ত-র বিবরণ

মুসলিম ইবনে ইয়াসার (রাঃ) বলেন, কিছু লোক হযরত ওমর ফারূক (রাঃ)-এর নিকটে সূরা আ‘রাফ ১৭২ আয়াতের মর্ম জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে প্রশ্ন করা হ’লে তাঁকে আমি বলতে শুনেছি যে, ‘আল্লাহ তা‘আলা আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করেন।[18] অতঃপর নিজের ডান হাত তার পিঠে বুলিয়ে দিলেন। তখন তার ঔরসে যত সৎ মানুষ জন্মাবার ছিল, তারা সব বেরিয়ে এল। আল্লাহ বললেন, এদেরকে আমি জান্নাতের জন্য সৃষ্টি করেছি এবং এরা দুনিয়াতে জান্নাতেরই কাজ করবে। অতঃপর তিনি পুনরায় তার পিঠে হাত বুলালেন, তখন সেখান থেকে একদল সন্তান বের করে আনলেন এবং বললেন, এদেরকে আমি জাহান্নামের জন্যে সৃষ্টি করেছি। এরা দুনিয়াতে জাহান্নামের কাজই করবে। একথা শুনে জনৈক ছাহাবী প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! তাহ’লে আর আমল করানোর উদ্দেশ্য কি? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, যখন আল্লাহ কাউকে জান্নাতের জন্য সৃষ্টি করেন, তখন তিনি তাকে দিয়ে জান্নাতের কাজই করিয়ে নেন, এমনকি তার মৃত্যুও অনুরূপ কাজের মধ্যে হয়ে থাকে। অতঃপর আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করান। পক্ষান্তরে যখন তিনি কাউকে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেন, তখন তাকে দিয়ে জাহান্নামের কাজই করিয়ে নেন। এমনকি তার মৃত্যুও অনুরূপ কাজের মধ্যে হয়ে থাকে। অতঃপর আল্লাহ তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করান।[19] আবুদ্দারদা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ডান মুষ্টির লোকগুলো ছিল সুন্দর চকচকে ক্ষুদ্র পিপীলিকা দলের ন্যায়। আর বাম মুষ্টির ক্ষুদ্র লোকগুলো ছিল কালো কয়লার ন্যায়’।[20]

উল্লেখ্য যে, কুরআনে বলা হয়েছে, ‘বনু আদমের পৃষ্ঠদেশ থেকে’ (আ‘রাফ ১৭২)। অন্যদিকে হাদীছে বলা হয়েছে, ‘আদমের পৃষ্ঠদেশ’ থেকে- মূলতঃ উভয়ের মধ্যে কোন বৈপরিত্য নেই। আদম যেহেতু বনু আদমের মূল এবং আদি পিতা, সেহেতু তাঁর পৃষ্ঠদেশ বলা আর বনু আদমের পৃষ্ঠদেশ বলা একই কথা। তাছাড়া আদমের দেহের প্রতিটি লোমকূপ থেকে অসংখ্য বনু আদমকে বের করে এনে উপস্থিত করানো আল্লাহর জন্য বিচিত্র কিছুই নয়।
মানুষ যেহেতু তার ভাগ্য সম্পর্কে জানে না, সেহেতু তাকে সর্বদা জান্নাত লাভের আশায় উক্ত পথেই কাজ করে যেতে হবে। সাধ্যমত চেষ্টা সত্ত্বেও ব্যর্থ হ’লে বুঝতে হবে যে, ওটাই তার তাকদীরের লিখন ছিল। বান্দাকে ভাল ও মন্দ দু’টি করারই স্বাধীন এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে। আর এই ইচ্ছাশক্তি প্রয়োগের স্বাধীনতার কারণেই বনু আদম আল্লাহর সেরা সৃষ্টির মর্যাদায় অভিষিক্ত হয়েছে। আর একারণেই তাকে তার ভাল ও মন্দ কাজের পরিণতি ভোগ করতে হয়।
এখানে আদমের ঔরস বলতে আদম ও তার ভবিষ্যৎ সন্তানদের ঔরস বুঝানো হয়েছে। এখানে ‘বংশধর’ বলতে তাদের অশরীরী আত্মাকে বুঝানো হয়নি, বরং আত্মা ও দেহের সমন্বয়ে জ্ঞান ও চেতনা সম্পন্ন ক্ষুদ্র অবয়ব সমূহকে বুঝানো হয়েছে, যাদের কাছ থেকে সেদিন সজ্ঞানে তাদের প্রতিজ্ঞা ও প্রতিশ্রুতি নেওয়া হয়েছিল। আর এটা আল্লাহর জন্য খুবই সহজ। আজকের বিজ্ঞান একটা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অণুর ভিতরে গোটা সৌরমন্ডলীয় ব্যবস্থা সম্পর্কে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে। ফিল্মের মাধ্যমে একটি বিরাটকায় বস্ত্তকে একটি ছোট্ট বিন্দুর আয়তনে দেখানো হচ্ছে। কাজেই আল্লাহ তা‘আলা যদি উক্ত অঙ্গীকার অনুষ্ঠানে সকল আদমসন্তানকে জ্ঞান-বুদ্ধি সম্পন্ন করে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র দেহে অণু-বিন্দুতে অস্তিত্ব দান করে থাকেন, তবে তাতে আশ্চর্য হবার কিছু নেই। তাছাড়া জ্ঞানসম্পন্ন না হ’লে এবং বিষয়টি তাদের অনুধাবনে ও উপলব্ধিতে না আসলে এ ধরনের প্রতিশ্রুতি গ্রহণের ও অঙ্গীকার ঘোষণার কোন গুরুত্ব থাকে না।
প্রশ্ন হ’তে পারে যে, সৃষ্টির সূচনায় গৃহীত এই প্রতিজ্ঞা ও প্রতিশ্রুতির কথা পরবর্তীতে মানুষের ভুলে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। তাহ’লে এ ধরনের প্রতিশ্রুতি গ্রহণের ফলাফলটা কি? এর জবাব এই যে, আদি পিতা-মাতা আদম-হাওয়ার রক্ত ও মানসিকতার প্রভাব যেমন যুগে-যুগে দেশে-দেশে সকল ভাষা ও বর্ণের মানুষের মধ্যে সমভাবে পরিদৃষ্ট হয়, তেমনিভাবে সেদিনে গৃহীত তাওহীদের স্বীকৃতি ও প্রতিশ্রুতির প্রভাব সকল মানুষের মধ্যেই কমবেশী বিদ্যমান রয়েছে। মানুষের অস্তিত্বই মানুষকে তার সৃষ্টিকর্তার সন্ধান দেয় ও বিপন্ন অবস্থায় তার কাছে আশ্রয় গ্রহণের জন্য তার হৃদয় ব্যাকুল হয়ে ওঠে।
হযরত আদম (আঃ)
তাই তো দেখা গেছে, বিশ্ব ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম শাসক ও আল্লাহদ্রোহী ফেরাঊন ডুবে মরার সময় চীৎকার দিয়ে আল্লাহর উপরে তার বিশ্বাস ঘোষণা করেছিল’ (ইউনুস ১০/৯০-৯১)। মক্কা-মদীনার কাফের-মুশরিকরা শেষনবীর সাথে শত্রুতা পোষণ করলেও কখনো আল্লাহকে অস্বীকার করেনি। আধুনিক বিশ্বের নাস্তিকসেরা স্ট্যালিনকে পর্যন্ত শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের পূর্ব মুহূর্তে ‘ওহ মাই গড’ বলে চীৎকার করে উঠতে শোনা গেছে। প্রকৃতপক্ষে সৃষ্টির সূচনালগ্নে গৃহীত উক্ত স্বীকারোক্তি প্রত্যেকটি মানুষের হৃদয়ে আল্লাহর অস্তিত্বের প্রতি বিশ্বাসের বীজ বপন করে দিয়েছে। চাই তার বিকাশ কোন শিরকী ও ভ্রান্ত পদ্ধতিতে হৌক বা নবীদের দেখানো সঠিক তাওহীদী পদ্ধতিতে হৌক।
এ কথাটাই হাদীছে এসেছে এভাবে যে, مَامِنْ مَوْلُوْدٍ إلاَّ يُوْلَدُ عَلَى الْفِطْرَةِ فَأَبْوَاهُ يُهَوِّدَانِهِ اَوْ يُنَصِّرَانِهِ أَوْ يُمَجِّسَانِهِ... ‘প্রত্যেক মানবশিশুই ফিৎরাতের উপরে জন্মগ্রহণ করে। অতঃপর তার পিতা-মাতা তাকে ইহুদী-নাছারা বা মজূসী (অগ্নিউপাসক) বানায়’।[21] এখানে ‘ফিৎরাত’ অর্থ স্বভাবধর্ম ইসলাম।[22] অর্থাৎ মানব শিশু কোন শিরকী ও কুফরী চেতনা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে না। বরং আল্লাহকে চেনা ও তার প্রতি আনুগত্য ও আত্মসমর্পণের চেতনা ও যোগ্যতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। এর ফলে নবীদের প্রদত্ত তাওহীদের শিক্ষাকে সে অত্যন্ত সহজে ও সাগ্রহে বরণ করে নেয়। কেননা শুধু জন্মগত চেতনার কারণেই কেউ মুসলমান হ’তে পারে না। যতক্ষণ না সে নবীর মাধ্যমে প্রেরিত দ্বীন সজ্ঞানে স্বেচ্ছায় কবুল করে।
ছহীহ মুসলিমের অপর বর্ণনায় এসেছে, وَإِنِّىْ خَلَقْتُ عِبَادِيْ حُنَفَاءَ كُلَّهُمْ وَأَنَّهُمْ أَتَتْهُمْ الشَّيَاطِيْنُ فَاجْتَالَتْهُمْ عَنْ دِيْنِهِمْ... ‘আল্লাহ বলেছেন, যে আমি আমার বান্দাদের ‘হানীফ’ অর্থাৎ ‘আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠ’ রূপে সৃষ্টি করেছি। অতঃপর শয়তান তার পিছে লেগে তাকে আল্লাহর পথ থেকে দূরে নিয়ে গেছে।[23] আল্লাহ বলেন, فِطْرَةَ اللَّهِ الَّتِيْ فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَا لاَ تَبْدِيْلَ لِخَلْقِ اللَّهِ ‘আল্লাহর ফিৎরত, যার উপরে তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর এই সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই’ (রূম ৩০/৩০)।
মোট কথা প্রত্যেক মানবশিশু স্বভাবধর্ম ইসলামের উপরে জন্মগ্রহণ করে এবং নিজ সৃষ্টিকর্তাকে চেনার ও তাকে মেনে চলার অনুভূতি ও যোগ্যতা নিয়ে সৃষ্টি হয়। যদিও পিতা-মাতা ও পরিবেশের কারণে কিংবা শয়তানের ওয়াসওয়াসায় পরবর্তীতে অনেকে বিভ্রান্ত হয়। অতএব কাফির-মুমিন-মুশরিক সবার মধ্যে আল্লাহকে চেনার ও তাঁর ইবাদত ও আনুগত্যের চেতনা ও যোগ্যতা বিদ্যমান রয়েছে। এই সৃষ্টিগত চেতনা ও অনুভূতিকে কেউ পরিবর্তন করতে পারে না। অর্থাৎ কুশিক্ষা, কুসঙ্গ ও শয়তানী সাহিত্য পাঠ করে বা নষ্ট ব্লু ফিল্মের নীল দংশনে উক্ত চেতনাকে পরিবর্তনের চেষ্টা করা আল্লাহর সৃষ্টির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার শামিল। অতএব উক্ত সৃষ্টিগত চেতনাকে সমুন্নত রাখাই ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের কর্তব্য।
একথা ব্যক্ত করে আল্লাহ বলেন, وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلاَّ لِيَعْبُدُوْنِ- ‘আমি জিন ও ইনসানকে আমার ইবাদত ব্যতীত অন্য কোন কাজের জন্য সৃষ্টি করিনি’ (যারিয়াত ৫১/৫৬)। অর্থাৎ আমি তার প্রকৃতিতে আমার প্রতি ইবাদত ও দাসত্বের আগ্রহ ও যোগ্যতা সৃষ্টি করে দিয়েছি। এটাকে সঠিক অর্থে কাজে লাগালে আমার অবাধ্যতামূলক কোন কাজ বান্দার দ্বারা সংঘটিত হবে না এবং জগতসংসারেও কোন অশান্তি ঘটবে না। যেমনভাবে কোন মুসলিম শিশু জন্মগ্রহণের সাথে সাথে তার কানে আযান শোনানো হয়।[24] অথচ ঐ শিশু আযানের মর্ম বুঝে না বা বড় হয়েও তার সেকথা মনে থাকে না। অথচ ঐ আযানের মাধ্যমে তার হৃদয়ে প্রোথিত হয়ে যায় তাওহীদ, রিসালাত ও ইবাদতের বীজ। যার প্রভাব সে আজীবন অনুভব করে। সে বে-আমল হ’লেও ‘ইসলাম’-এর গন্ডী থেকে খারিজ হয়ে যেতে তার অন্তর কখনোই সায় দেয় না। তার অবচেতন মনে আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি আনুগত্য বোধ অক্ষুণ্ণ থাকে। বিশেষ করে হতাশা ও বিপন্ন অবস্থায় সে তার প্রভুর সাহায্য ও সান্নিধ্য লাভের জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে।
অর্থ না বুঝলেও কুরআন পাঠ ও আযানের ধ্বনি মানুষের মনকে যেভাবে আকৃষ্ট করে এবং হৃদয়ে যে স্থায়ী প্রভাব ফেলে তার কোন তুলনা নেই। একারণেই কাফির আরব নেতারা মানুষকে কুরআন শুনতে দিত না। অথচ নিজেরা রাতের অন্ধকারে তা গোপনে আড়ি পেতে শুনত এবং একে জাদু বলত। শ্রেষ্ঠ আরব কবিগণ কুরআনের অলৌকিকত্বের কাছে আত্মসমর্পণ করেন এমনকি অন্যতম শ্রেষ্ঠ আরবী কবি লাবীদ বিন রাবী‘আহ কুরআন শোনার পর কাব্যচর্চা পরিত্যাগ করেন। গত শতাব্দীর শুরুতে তুরষ্কে ওছমানীয় খেলাফত উৎখাত করে কামাল পাশা ধর্মনিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠা করেন এবং মসজিদ সমূহে আরবী আযান বন্ধ করে তুর্কী ভাষায় আযান দেওয়ার নির্দেশ জারি করেন। কিন্তু তাতে আরবী আযানের প্রতি মানুষের হৃদয়াবেগ আরও বৃদ্ধি পায়। ফলে গণবিদ্রোহ দেখা দিলে তিনি উক্ত আদেশ বাতিল করতে বাধ্য হন।
আধুনিক বিজ্ঞানও প্রমাণ করে দিয়েছে যে, শব্দ মানব মনে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। তাই আল্লাহ প্রেরিত আযানের ধ্বনি সদ্যপ্রসূত শিশুর কচি মনে আজীবনের জন্য সুদূরপ্রসারী স্থায়ী প্রভাব বিস্তার করবে- এটাই স্বাভাবিক। অতএব সৃষ্টির সূচনাকালের গৃহীত ‘আহ্দে আলাস্ত্ত’ বা আল্লাহর প্রতি ইবাদত ও আনুগত্যের প্রতিজ্ঞা ও প্রতিশ্রুতি মানব মনে জীবনব্যাপী স্থায়ী প্রভাব বিস্তার করে থাকে। যার কথা বারবার বান্দাকে স্মরণ করিয়ে দিতে হয় এবং যার বিরোধিতা করা আত্মপ্রবঞ্চনা করার শামিল।
[18]. আয়াতটি হ’লঃ وَإِذْ أَخَذَ رَبُّكَ مِن بَنِي آدَمَ مِنْ ظُهُوْرِهِمْ ذُرِّيَّتَهُمْ وَأَشْهَدَهُمْ عَلَى أَنفُسِهِمْ أَلَسْتُ بِرَبِّكُمْ قَالُواْ بَلَى شَهِدْنَا أَن تَقُولُواْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِنَّا كُنَّا عَنْ هَذَا غَافِلِيْنَ. ‘আর যখন তোমার পালনকর্তা বনু আদমের পৃষ্ঠদেশ থেকে তাদের সন্তানদের বের করে আনলেন এবং নিজের উপর তাদের প্রতিজ্ঞা করালেন ‘আমি কি তোমাদের পালনকর্তা নই’? তারা বলল, অবশ্যই। ‘আমরা এ বিষয়ে অঙ্গীকার করছি’ আর এটা এজন্য, যাতে তোমরা ক্বিয়ামতের দিন একথা বলতে না পারো যে, বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না’ (আ‘রাফ ৭/১১২)।
[19]. মালেক, আহমাদ, তিরমিযী, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৯৫ ‘ঈমান’ অধ্যায় ‘তাক্বদীরে বিশ্বাস’ অনুচ্ছেদ।
[20]. আহমাদ, মিশকাত হা/১১৯ ‘তাক্বদীরে বিশ্বাস’ অনুচ্ছেদ।
[21]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৯০ ‘ঈমান’ অধ্যায়, ‘তাক্বদীরে বিশ্বাস’ অনুচ্ছেদ।
[22]. যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, على فطرة الاسلام ‘ইসলামের উপর’ ছহীহ ইবনু হিববান হা/১৩২; শু‘আয়েব আরনাঊত্ব বলেন, রাবীগণ সকলে বিশ্বস্ত।
[23]. মুসলিম হা/২৮৬৫ ‘জান্নাতের বিবরণ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ ১৬; আহমাদ হা/১৬৮৩৭।
[24]. আলবানী, ছহীহ তিরমিযী হা/১২২৪; মিশকাত হা/৪১৫৭ ‘আক্বীক্বা’ অনুচ্ছেদ।
 ‘আহ্দে আলাস্ত্ত-র উদ্দেশ্য
আল্লাহ বলেন,
أَنْ تَقُولُوْا يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِنَّا كُنَّا عَنْ هَذَا غَافِلِينَ، أَوْ تَقُولُوْا إِنَّمَا أَشْرَكَ آبَاؤُنَا مِنْ قَبْلُ وَكُنَّا ذُرِّيَّةً مِّن بَعْدِهِمْ أَفَتُهْلِكُنَا بِمَا فَعَلَ الْمُبْطِلُونَ، وَكَذَلِكَ نُفَصِّلُ الآيَاتِ وَلَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ- (الأعراف ১৭২ -১৭৪)-
‘(আমি পৃথিবীতে আবাদ করার আগেভাগে তোমাদের অঙ্গীকার এজন্যেই নিয়েছি) যাতে তোমরা ক্বিয়ামতের দিন একথা বলতে না পার যে, (তাওহীদ ও ইবাদতের) এ বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না’। ‘অথবা একথা বলতে না পার যে, শিরকের প্রথা তো আমাদের পূর্বে আমাদের বাপ-দাদারা চালু করেছিল। আমরা হ’লাম তাদের পরবর্তী বংশধর। তাহ’লে সেই বাতিলপন্থীরা যে কাজ করেছে, তার জন্য কি আপনি আমাদের ধ্বংস করবেন’? আল্লাহ বলেন, ‘বস্ত্ততঃ এভাবে আমরা (আদিকালে ঘটিত) বিষয়সমূহ সবিস্তারে বর্ণনা করলাম, যাতে তারা (অর্থাৎ অবিশ্বাসীরা আমার পথে) ফিরে আসে’ (আ‘রাফ ১৭২-১৭৪)।
উপরোক্ত বর্ণনার আলোকে বুঝা যায় যে, উক্ত প্রতিজ্ঞা ছিল দু’ধরনের। এক- আদিকালে ঘটিত প্রতিজ্ঞা (الميثاق الأزلى ) এবং দুই- অহীর বিধানের আনুগত্য করার জাগতিক প্রতিজ্ঞা (والميثاق الإنزالي الحالي ) যা প্রত্যেক নবীর আমলে তার উম্মতগণের উপরে ছিল অপরিহার্য।
 অন্যান্য অঙ্গীকার গ্রহণ

(১) নবী-রাসূলদের প্রতিশ্রুতি :


‘আহ্দে আলাস্ত্তর মাধ্যমে সাধারণভাবে সকল আদম সন্তানের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি গ্রহণের পর আল্লাহ নবী-রাসূলদের কাছ থেকে বিশেষভাবে প্রতিশ্রুতি নেন; তারা যেন আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রাপ্তব্য রেসালাতের বাণীসমূহ স্ব স্ব উম্মতের নিকটে যথাযথভাবে পৌঁছে দেন এবং এতে কারো ভয়-ভীতি ও অপবাদ-ভৎর্সনার পরোয়া না করেন।


(২) উম্মতগণের প্রতিশ্রুতি :


অনুরূপভাবে বিভিন্ন নবীর উম্মতগণের কাছ থেকেও প্রতিশ্রুতি নেওয়া হয়, তারা যেন নিজ নিজ নবী-রাসূলদের আনুগত্য করে ও কোন অবস্থায় তাদের নাফরমানী না করে।
যেমন ছাহাবী উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) সূরা আ‘রাফ ১৭২ আয়াত (অনুবাদঃ ‘যখন তোমার প্রভু বনু আদমের পিঠ সমূহ থেকে তাদের সন্তানদের বের করে আনলেন’)-এর ব্যাখ্যায় বলেন, অতঃপর আল্লাহ তাদের একত্রিত করলেন এবং নারী-পুরুষে বিভক্ত করলেন। অতঃপর তাদেরকে ভবিষ্যতের আকৃতি দান করলেন ও কথা বলার ক্ষমতা দিলেন। তখন তারা কথা বলল। অতঃপর আল্লাহ তাদের কাছ থেকে প্রতিজ্ঞা ও প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করলেন এবং তাদেরকে নিজেদের উপরে সাক্ষী করে জিজ্ঞেস করলেন, আমি কি তোমাদের প্রতিপালক নই? তারা বলল, হ্যাঁ। আল্লাহ বললেন, আমি তোমাদের একথার উপর সাত আসমান ও সাত যমীনকে সাক্ষী করছি এবং তোমাদের উপর তোমাদের পিতা আদমকে সাক্ষী রাখছি, যাতে তোমরা ক্বিয়ামতের দিন একথা বলতে না পার যে, এ প্রতিশ্রুতির কথা আমরা জানতাম না।
তোমরা জেনে রাখ যে, আমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই ও আমি ব্যতীত কোন প্রতিপালক নেই। আর তোমরা আমার সাথে কাউকে শরীক করো না। সত্বর আমি তোমাদের নিকট আমার রাসূলগণকে পাঠাব। তাঁরা তোমাদেরকে আমার সাথে কৃত এই প্রতিজ্ঞা ও প্রতিশ্রুতির কথা স্মরণ করিয়ে দেবেন। আর আমি তোমাদের প্রতি আমার কিতাব সমূহ নাযিল করব। তখন তারা বলল, আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই আপনি আমাদের প্রভু এবং উপাস্য। আপনি ব্যতীত আমাদের কোন প্রতিপালক নেই এবং আপনি ব্যতীত আমাদের কোন উপাস্য নেই। এভাবে তারা স্বীকৃতি দিল। অতঃপর আদমকে তাদের উপর উঠিয়ে ধরা হ’ল। তিনি তাদের দিকে দেখতে লাগলেন। তিনি দেখলেন তাদের মধ্যকার ধনী-গরীব, সুন্দর-অসুন্দর সবাইকে। তখন তিনি বললেন, হে প্রভু! আপনি কেন আপনার বান্দাদের সমান করলেন না? আল্লাহ বললেন, আমি চাই যে, এর ফলে আমার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হউক।
তিনি তাদের মধ্যে নবীগণকে দেখলেন প্রদীপ সদৃশ। তাঁদের নিকট থেকে পৃথকভাবে রিসালাত ও নবুঅতের দায়িত্ব পালনের বিশেষ অঙ্গীকার নেওয়া হয়। যে সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘যখন আমরা নবীগণের নিকট থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করলাম এবং আপনার নিকট থেকেও এবং নূহ, ইবরাহীম, মূসা ও মারিয়াম-পুত্র ঈসার নিকট থেকে’ (আহযাব ৩৩/৭)। ঐ রূহগুলির মধ্যে ঈসার রূহ ছিল, যা মারিয়ামের কাছে পাঠানো হয়। উবাই থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, উক্ত রূহ মারিয়ামের মুখ দিয়ে প্রবেশ করে’।[25]


(৩) শেষনবীর জন্য প্রতিশ্রুতি :


এরপর সকল নবীর কাছ থেকে বিশেষ প্রতিশ্রুতি নেওয়া হয়েছে শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদাকে মেনে নেওয়ার জন্য, তাঁর অনুসরণের জন্য এবং তাঁর যুগ পেলে তাঁকে সাহায্য করার জন্য। যেমন- আল্লাহ বলেন,
وَإِذْ أَخَذَ اللّهُ مِيْثَاقَ النَّبِيِّيْنَ لَمَا آتَيْتُكُم مِّنْ كِتَابٍ وَّحِكْمَةٍ ثُمَّ جَاءَكُمْ رَسُولٌ مُّصَدِّقٌ لِّمَا مَعَكُمْ لَتُؤْمِنُنَّ بِهِ وَلَتَنْصُرُنَّهُ قَالَ أَأَقْرَرْتُمْ وَأَخَذْتُمْ عَلَى ذَلِكُمْ إِصْرِيْ قَالُوْا أَقْرَرْنَا قَالَ فَاشْهَدُوْا وَأَنَا مَعَكُم مِّنَ الشَّاهِدِيْنَ- (آل عمران ৮১)-
‘আর আল্লাহ যখন নবীগণের কাছ থেকে অঙ্গীকার নিলেন যে, আমি যা কিছু তোমাদেরকে দান করেছি কিতাব ও হিকমত, অতঃপর তোমাদের নিকটে (যখন) রাসূল (শেষনবী) আসেন তোমাদের নিকট যা আছে (তাওরাত-ইঞ্জীল) তার সত্যয়নকারী হিসাবে, তখন সেই রাসূলের (শেষনবীর) প্রতি তোমরা ঈমান আনবে ও তাকে সাহায্য করবে। তিনি বললেন, তোমরা কি অঙ্গীকার করছ? এবং উপরোক্ত শর্তে তোমরা আমার ওয়াদা কবুল করে নিচ্ছ? তারা (নবীগণ) বলল, আমরা অঙ্গীকার করছি। তিনি (আল্লাহ) বললেন, তাহ’লে তোমরা সাক্ষী থাক। আর আমিও তোমাদের সাথে সাক্ষী রইলাম’ (আলে ইমরান ৩/৮১)।
অন্যত্র আল্লাহ বলেন,
وَإِذْ قَالَ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ يَا بَنِي إِسْرَائِيلَ إِنِّي رَسُولُ اللَّهِ إِلَيْكُم مُّصَدِّقاً لِّمَا بَيْنَ يَدَيَّ مِنَ التَّوْرَاةِ وَمُبَشِّراً بِرَسُولٍ يَأْتِي مِن بَعْدِي اسْمُهُ أَحْمَدُ...،
‘স্মরণ কর, যখন মারিয়াম-তনয় ঈসা বলল, হে ইস্রাঈল সন্তানগণ! আমি তোমাদের কাছে আল্লাহর প্রেরিত রাসূল এবং আমার পূর্ববর্তী তাওরাত কিতাবের সত্যয়নকারী। আর আমি একজন রাসূলের সুসংবাদ দানকারী, যিনি আমার পরে আসবেন, যার নাম হবে ‘আহমাদ’... (ছফ ৬১/৬)।
উপরোক্ত আয়াত দ্বয়ে বুঝা যায় যে, বিগত সকল নবী যেমন তাঁর পূর্ববর্তী নবীর সত্যয়নকারী ছিলেন, তেমনি সকল নবী স্ব স্ব উম্মতের নিকটে শেষনবী মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের আগমনবার্তা শুনিয়ে গেছেন ও তাঁর প্রতি ঈমান, আনুগত্য ও তাঁকে সার্বিকভাবে সাহায্য করার জন্য অছিয়ত করে গেছেন। এদিক দিয়ে শেষনবী যে বিশ্বনবী ছিলেন এবং তাঁর আনীত শরী‘আতের মধ্যে বিগত সকল শরী‘আত যে পূর্ণতাপ্রাপ্ত হয়েছে, তা পরিষ্কার হয়ে যায়।


(৪) ইহুদী পন্ডিতদের প্রতিশ্রুতি :


উপরোক্ত ওয়াদা ছাড়াও ইহুদী-নাছারা পন্ডিতদের কাছ থেকে বিশেষ প্রতিশ্রুতি নেওয়া হয়, যাতে তারা সত্য গোপন না করে। যেমন আল্লাহ বলেন,
وَإِذْ أَخَذَ اللّهُ مِيْثَاقَ الَّذِيْنَ أُوتُوْا الْكِتَابَ لَتُبَيِّنُنَّهُ لِلنَّاسِ وَلاَ تَكْتُمُونَهُ فَنَبَذُوْهُ وَرَاءَ ظُهُورِهِمْ وَاشْتَرَوْا بِهِ ثَمَناً قَلِيْلاً فَبِئْسَ مَا يَشْتَرُوْنَ- (آل عمران ১৮৭)-
‘আর আল্লাহ যখন আহলে কিতাবদের (পন্ডিতদের) নিকট থেকে প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করলেন যে, তারা তা লোকদের নিকটে বর্ণনা করবে ও তা গোপন করবে না। তখন তারা সে প্রতিজ্ঞাকে পিছনে রেখে দিল, আর তা বেচা-কেনা করল সামান্য পয়সার বিনিময়ে। কতই না মন্দ তাদের এ বেচা-কেনা’ (আলে ইমরান ৩/১৮৭)।


(৫) সাধারণ বনু ইস্রাঈলগণের প্রতিশ্রুতি :


অতঃপর বনু ইস্রাঈলের সাধারণ লোকদের কাছ থেকেও প্রতিশ্রুতি নেওয়া হয়। যেমন আল্লাহ বলেন,
وَإِذْ أَخَذْنَا مِيثَاقَ بَنِيْ إِسْرَائِيْلَ لاَ تَعْبُدُونَ إِلاَّ اللَّهَ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا وَذِي الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِيْنِ وَقُولُوْا لِلنَّاسِ حُسْنًا وَأَقِيْمُوا الصَّلاَةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ ثُمَّ تَوَلَّيْتُمْ إِلاَّ قَلِيلاً مِنْكُمْ وَأَنْتُمْ مُعْرِضُوْنَ- (البقرة ৮৩)-
‘যখন আমরা বনু ইস্রাঈলগণের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি নিলাম এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারু ইবাদত করবে না। আর তোমরা পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন ও ইয়াতীম-মিসকীনদের সাথে সদ্ব্যবহার করবে এবং মানুষের সাথে সুন্দর কথা বলবে, ছালাত কায়েম করবে ও যাকাত আদায় করবে। কিন্তু কিছু লোক ব্যতীত তোমরা সবাই মুখ ফিরিয়ে নিলে এবং তোমরা তা অগ্রাহ্য করলে’ (বাক্বারাহ ২/৮৩)।
বলা বাহুল্য যে, অধিকাংশ নবী বনু ইস্রাঈল থেকেই হয়েছেন। কিন্তু বনু ইস্রাঈলরাই অধিকাংশ নবীকে হত্যা করেছে, তাদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে, তাদের ঐশী কিতাবসমূহকে পরিবর্তন ও বিকৃত করেছে, তাদের নবীদের চরিত্র হনন করেছে, তাদের নামে কলংক লেপন করেছে এবং অবশেষে শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে চিনতে পেরেও (বাক্বারাহ ২/১৪৬; আন‘আম ৬/২০) না চেনার ভান করেছে ও তাঁর সঙ্গে চূড়ান্ত গাদ্দারী করেছে। অবশ্য তাদের মধ্যে অনেকে (قِسِّيْسِيْنَ وَرُهْبَانًا) ঈমান এনে ধন্য হয়েছিলেন এবং আল্লাহর নিকটে কৃত ওয়াদা পূর্ণ করেছিলেন।[26] যেমন খ্যাতনামা ছাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম, আদী ইবনে হাতেম প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। এতদ্ব্যতীত হাবশার খৃষ্টান বাদশাহ নাজ্জাশী নিজে তো শেষনবীর উপরে বিশ্বাসী ছিলেন। অধিকন্তু তিনি আবিসিনিয়ার ৬২ জন ও সিরিয়ার ৮ জন মোট ৭০ জনের একটি শীর্ষস্থানীয় খৃষ্টান ধর্মীয় প্রতিনিধিদলকে মদীনায় প্রেরণ করেন। তাঁরা রাসূলের মুখে সূরা ইয়াসীন শুনে অবিরল ধারায় অশ্রু বিসর্জন দেন। অতঃপর সবাই ইসলাম গ্রহণ করেন’। তাদের প্রত্যাবর্তনের পর নাজ্জাশী নিজের ইসলাম কবুলের কথা ঘোষণা করেন এবং একখানা পত্র লিখে স্বীয় পুত্রের নেতৃত্বে আরেকটি প্রতিনিধিদল মদীনায় প্রেরণ করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে জাহায ডুবির কারণে তারা সবাই পথিমধ্যে মৃত্যুবরণ করেন।[27]
[25]. আহমাদ, মওকূফ ছহীহ, মারফূ হুকমী, মিশকাত হা/১২২ ‘তাক্বদীরে বিশ্বাস’ অনুচ্ছেদ।
[26]. মায়েদাহ ৫/৮২; ক্বাছাছ ২৮/৫২-৫৪; ঐ, তাফসীর ত্বাবারী ২০/৫৬ পৃ: ; তাফসীর ইবনু কাছীর; ত্বাবারী ৩২+৮=৪০ জন এবং ইবনু কাছীর ৭০ জন বলেছেন।
[27]. মুফতী মুহাম্মাদ শফী, তাফসীর মা‘আরেফুল কুরআন (বঙ্গানুবাদ সংক্ষেপায়িত : মদীনা ত্বাইয়েবা ১৪১৩/১৯৯৩), পৃঃ ৩৪০।

সূত্রঃ HadithBD

আরো পড়ুনঃ 

হযরত আদম (আঃ) পর্বঃ-১

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

গরমে চুলকানি থেকে মুক্ত থাকার কার্যকরী উপায়।

  গরমের দিনে তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চুলকানির সমস্যা অনেকেরই বেড়ে যায়। ঘাম, আর্দ্রতা, ত্বকের সংবেদনশীলতা কিংবা ফাঙ্গাল ইনফেকশনের কারণে এই অস্বস্তি দেখা দিতে পারে। তবে কিছু সচেতনতা ও ঘরোয়া পদ্ধতি মেনে চললে গরমেও চুলকানি থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব। চলুন জেনে নেওয়া যাক বিস্তারিত: গরমে চুলকানির প্রধান কারণঃ ১. ঘাম ও ময়লা জমা: ঘামের সাথে ময়লা ও ব্যাকটেরিয়া মিশে ত্বকে জমে, যা রোমকূপ বন্ধ করে ফুসকুড়ি বা চুলকানি সৃষ্টি করে।   ২. শুষ্ক ত্বক: গরমে পানিশূন্যতা ও এসি/ফ্যানের কারণে ত্বক শুষ্ক হয়ে চুলকায়।   ৩. অ্যালার্জি: গরমে ধুলোবালি, পরাগরেণু বা সিনথেটিক কাপড়ের সংস্পর্শে অ্যালার্জিজনিত চুলকানি হতে পারে।   ৪. মশা-মাছির কামড়: গরমে মশা-পোকা বেশি সক্রিয় হয়, তাদের কামড়ে ত্বকে জ্বালাপোড়া ও চুলকানি দেখা দেয়।   চুলকানি প্রতিরোধের ১০টি টিপসঃ ১. পরিষ্কার থাকুন: দিনে অন্তত দুবার হালকা গরম পানিতে গোসল করুন। ঘাম ও ময়লা দূর করতে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল সাবান ব্যবহার করুন।   ২. হালকা সুতির পোশাক: টাইট বা সিনথেটিক কাপড় এড়িয়ে সুতি/লিনেনের ঢিলেঢালা পোশাক পরুন। এ...

Write a paragraph on "The consequences of climate change in Bangladesh"

  The consequences of climate change in Bangladesh Climate change poses severe threats to Bangladesh, a low-lying delta nation highly vulnerable to environmental shifts. Rising sea levels exacerbate coastal erosion, displacing communities and submerging arable land, while saltwater intrusion contaminates freshwater sources and soil, crippling agriculture—a lifeline for millions. Intensified cyclones, such as Cyclone Sidr and Aila, and erratic monsoon patterns cause devastating floods and riverbank erosion, destroying homes, infrastructure, and livelihoods. By 2050, up to 18 million people could be displaced due to climate impacts. The Sundarbans, a critical mangrove ecosystem and natural storm barrier, faces degradation, threatening biodiversity and coastal resilience. Concurrently, shifting temperatures and rainfall disrupt crop yields, heightening food insecurity and poverty. Health risks from waterborne diseases and heatwaves further strain vulnerable populations. With limited r...

Write a paragraph about 'Three Zero Theory'

Three Zero Theory  Muhammad Yunus's Three Zero Theory presents a revolutionary approach to sustainable development through three ambitious goals: eliminating poverty, unemployment, and net carbon emissions. The Nobel laureate and microfinance pioneer argues that these interconnected challenges must be addressed simultaneously to create a just and sustainable world. His first zero - zero poverty - builds on his groundbreaking microcredit model, empowering the poor through access to capital and social businesses. The second zero - zero unemployment - promotes an entrepreneurial economy where everyone can become a job creator rather than a job seeker. The final zero - zero net carbon emissions - calls for environmentally responsible business practices to combat climate change. This holistic framework reimagines capitalism by prioritizing social welfare over profit maximization, offering practical solutions to global crises. Yunus's theory has gained international recognition as a ...