সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আস্তাগফিরুল্লাহ! বলার ফজিলত নিয়ে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহঃ) এর চমৎকার গল্প অবলম্বনে।



আলহামদুলিল্লাহ! 

শুরুতেই বলে রাখি,
ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহঃ)
ছিলেন ইমাম বুখারী (রহঃ) এর ওস্তাদ। তিনি ১০ লক্ষ হাদিস মুখস্ত রেখেছিলেন। তিনি যে হাদিস গ্রন্থ লিখেছিলেন তার নাম মুসনাদে আহমদ। সেখানে তিনি প্রায় ৪০ হাজার হাদিস লিপিবদ্ধ করেছিলেন।

একদিনের_ঘটনা! 
ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহঃ)
বৃদ্ধ মানুষটি হতভম্ব হয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলেন মসজিদের সামনে! এত রাতে কোন মানুষজনের ঘরে গিয়ে তাঁদের কষ্টের কারণ হতে চান নি তিনি। সেকারণেই চেয়েছিলেন মসজিদেই কাটিয়ে দিবেন রাতটুকু। নফল ছালাত আর কিছুটা ঘুমিয়ে দিব্যি রাত কাটিয়ে দেয়া যেত।

কিন্তু বাধ সাধলেন মসজিদের খাদেম। কোন এক অজানা কারণে তাঁকে পছন্দ করলেন না খাদেম। স্রেফ মানা করে দিলেন খাদেম– মসজিদে রাত কাটানো যাবে না। মসজিদের সামনে দাঁড়িয়ে খাদেম সাহেব সেই কথাটি-ই বেশ উঁচু গলায় কথা বলে দিলেন বৃদ্ধকে।

মসজিদ সাথে লাগানো রুটির দোকানে মধ্য বয়স্ক একজন বিশাল তন্দুরে রুটি বানাচ্ছেন। খাদেমের চড়া গলা তাঁর কানে পর্যন্ত গেল। রুটি বানানো বন্ধ রেখে মধ্যবয়স্ক মানুষটি ধীর পায়ে এগিয়ে গেলেন ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা বৃদ্ধ মানুষটির কাছে।

– আসসালামু আলাইকুম। পথিক বুঝি আপনি? আপনার আপত্তি না থাকলে আজকের রাত আমার সাথে কাটিয়ে দিতে পারেন। আমি ওপাশের দোকানে রুটি বানাই, একটু কষ্ট হয়তো হবে আপনার।
খুব খুশি হলেন বৃদ্ধ মানুষটি। রুটি বানানো লোকটির সাথে গিয়ে তার ঘরে উঠলেন। বৃদ্ধের শোয়ার আয়োজন করে দিয়ে আবার রুটি বানাতে লেগে গেলেন মানুষটি। বিছানায় আধশোয়া বৃদ্ধ খেয়াল করছিলেন- কাজের ফাঁকে ফাঁকে কি যেন পড়ছেন তাঁকে আশ্রয় দেয়া মানুষটি।

বৃদ্ধ জিজ্ঞেস করলেন, – কিছু মনে না করলে আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করি ভাই? রুটি বানাতে বানাতে আপনি কিছু পড়ছেন মনে হচ্ছে। দয়া করে বলবেন কি পড়ছেন?

– তেমন কিছু না, ইস্তিগফার আস্তাগফিরুল্লাহ আস্তাগফিরুল্লাহ (মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'য়ালার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা) করছি।

– এই যে কাজের ফাঁকেও একটানা ইস্তিগফার করছেন, কোন লাভ কি হয়েছে আপনার?
– জ্বী জনাব। আলহামদুলিল্লাহ, আমার মনে হয় এই ইস্তিগফারের কল্যাণেই মহান আল্লাহ এখন পর্যন্ত আমার যাবতীয় দোআ কবুল করেছেন; শুধু একটি দোআ ছাড়া।

– আপনার কোন দোআটি কবুল করেন নি ?
– আমাদের এখান থেকে অনেক দুরে আল্লাহর প্রিয় এক বান্দা থাকেন। জ্ঞান-গরিমা-মেধা-যুক্তি সবকিছুতেই আল্লাহ তায়ালার প্রিয় একজন তিনি।

আমার খুব শখ – একবার যদি তাঁর সাথে দেখা করতে যেতে পারতাম। কিছুটা সময় যদি কাটাতে পারতাম সেই জ্ঞানী বান্দার সাথে। আল্লাহ পাক আমার এই প্রার্থনাটি-ই শুধু কবুল করেন নি এখনও। নিশ্চয়ই কবুল করবেন তিনি। আমার কোন গুনাহের কারণে হয়তো এখনো কবুল হচ্ছে না।

বৃদ্ধ মানুষটির চোখ ভারী হয়ে এলো কান্নায়। ধরা গলায় কান্না চেপে জিজ্ঞেস করলেন তিনি, – আপনি কি আহমদ ইবনে হাম্বলের কথা বলছেন ভাই?
– জ্বী জনাব। আমি শায়খুল ইসলাম, জগত বিখ্যাত মুজতাহিদ ও মুহাদ্দীস ইমাম আহমাদ বিন মুহাম্মাদ বিন হাম্বল এর কথাই বলছি। আল্লাহ তা’আলা তাঁর প্রতি অবিরাম রহমত বর্ষণ করুক।
আস্তাগফিরুল্লাহ! বলার ফজিলত


বৃদ্ধ মানুষটি এবার উঠে এসে পাশে দাঁড়ালেন- “সেই পবিত্র স্বত্তার কসম- যাঁর হাতে আমার প্রাণ! আপনার ইস্তিগফার আল্লাহ পাক শুধু কবুল-ই করে নি, উপরন্তু আমাকে এই দূর দেশে, অচিন শহরে, মধ্য রাতে – আপনার ঘর পর্যন্ত নিয়ে এসেছেন। আমি-ই মহান আল্লাহ তাআ’লার সেই অধম বান্দা – আহমাদ ইবনে হাম্বল!”
(গ্রন্থ - মানাকিব আল ইমাম আহমাদ থেকে নেয়া) 

হাদীসের জগতে ইমাম আহমাদ (রহঃ) এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, তাঁর হাদীসের পারদর্শিতা সম্পর্কে এক কথায় বলা যায় তিনি হাদীসের এক বিশাল সাগর। ইমাম আব্দুল ওয়াহ্হাব আল ওয়ার্রাক বলেন, ‘‘আমি ইমাম আহমাদ বিন হাম্বলের মত আর কাউকে দেখিনি। তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো আপনি অন্যের চেয়ে ইমাম আহমাদ (রহঃ) এর মাঝে জ্ঞান-গরিমা বা মর্যাদা বেশী কি পেয়েছেন? তিনি বললেন, ইমাম আহমাদ এমন একজন ব্যক্তি যাকে ৬০,০০০ (ষাট হাজার) প্রশ্ন করা হয়েছে তিনি সকল প্রশ্নের জবাবে হাদ্দাছানা ওয়া আখাবারানা অর্থাৎ হাদীস হতে জবাব দিয়েছেন অন্য কিছু বলেন নি। (ত্ববাকাতুল হানাবিলাহ, ১/৯ পৃঃ)।

আস্তাগফিরুল্লাহ এর ফজিলত! 
রাসুলুল্লাহ (ছা.) এরশাদ করেছেন, ‘সু-সংবাদ তার জন্য, যার আমলনামায় অধিক ইস্তেগফার পাওয়া যাবে।’
 (ইবনে মাজাহ  হাদিস নং ৩৮০৮)।

ইস্তেগফারের রয়েছে বহুমুখী ফজিলত। যথা :
- ইস্তেগফার নির্ভেজাল একটি ইবাদত।
- গোনাহ মাপের মাধ্যম।
- বৃষ্টি বর্ষণের কারণ।
- সম্পদ ও সন্তান অর্জনে সহায়ক।
- জান্নাতে প্রবেশের সিঁড়ি।
- সার্বিক শক্তি অর্জনের মাধ্যম। কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘হে আমার কওম, তোমরা তোমাদের রবের কাছে ইস্তেগফার করো অতঃপর তার কাছে তওবা করো, তাহলে তিনি তোমাদের ওপর মুষলধারে বৃষ্টি পাঠাবেন এবং তোমাদের শক্তির সঙ্গে আরও শক্তি বৃদ্ধি করবেন। আর তোমরা অপরাধী হয়ে বিমুখ হয়ো না।’ (সূরা হুদ, আয়াত ৫২)।

- উত্তম ভোগ-উপকরণ অর্জনের চাবিকাঠি। কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমরা তোমাদের রবের কাছে ইস্তেগফার করো। তারপর তার কাছে ফিরে যাও, (তাহলে) তিনি তোমাদের নির্ধারিত সময় পর্যন্ত উত্তম ভোগ-উপকরণ দেবেন।’ 
(সূরা হুদ : আয়াত ৩)

- বালা-মসিবত দূর করে। কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ তাদের আজাব দানকারী নন এমতাবস্থায় যে, তারা ইস্তেগফার করছে।’ 
(সূরা আনফাল : আয়াত ৩৩)।

- আল্লাহ তায়ালা ইস্তেগফারের মাধ্যমে, আনুগত্যশীল ব্যক্তিদের আনুগত্য অনুযায়ী প্রতিদান বৃদ্ধি করে দেন। কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘(আর তোমরা তোমাদের রবের কাছে ইস্তেগফার করো। এরপর তার কাছে ফিরে যাও, তাহলে) অধিক আনুগত্যশীলকে তাঁর আনুগত্য মোতাবেক  দান করবেন।’ 
(সূরা হুদ : আয়াত ৩)।

- বান্দা ইস্তেগফারের প্রতি বেশি মুখাপেক্ষি। কারণ, দিনরাত আমরা শুধু গোনাহ আর গোনাহ করি। সুতরাং ইস্তেগফারের মাধ্যমে আল্লাহর কাছ থেকে যাবতীয় গোনাহ ক্ষমা করে নিতে হবে। 
- রহমত অবতীর্ণ হওয়ার কারণ।  কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘কেন তোমরা আল্লাহর কাছে ইস্তেগফার করছো না, যেন তোমাদের রহমত করা হয়?’ 
(সূরা নামল : আয়াত ৪৬)।

- মজলিস তথা বৈঠকের সব সগিরা গোনাহের জন্য কাফফারা।

- সর্বোপরি এটা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এর সুন্নতের অনুসরণ। কারণ, রাসূলুল্লাহ  (ছাঃ) দৈনিক কমপক্ষে সত্তরবার ইস্তেগফার পাঠ করতেন।

استغفر الله و اتوب اليه
আস্তাগফিরুল্লাহু ওয়া আতুবু ইলাইহি।
আল্লাহ্‌ আমাদের বেশী বেশী আস্তাগফিরুল্লাহ পড়ার তৌফিক দান করুক আমিন ।
ক্রেডিটঃ Nure Alam Siddike, উলামায়ে দেওবন্দ এর গ্রুপ থেকে।(ফেসবুক থেকে সংগ্রহিত)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

ব্যঞ্জনবর্ণ।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম। ব্যঞ্জনবর্ণ। বাংলায় ব্যঞ্জনবর্ণ ৩৯টি। ক      খ      গ      ঘ      ঙ      চ      ছ      জ      ঝ      ঞ      ট      ঠ      ড      ঢ       ণ      ত      থ      দ      ধ       ন      প       ফ      ব        ভ        ম       য        র      ল      শ      ষ      স      হ      ড়      ঢ়      য়      ৎ       ং       ঃ        ঁ।

স্বর বর্ণ।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম। স্বর বর্ণ। বাংলায় স্বর বর্ণ ১১ টি। অ      আ      ই      ঈ      উ      ঊ      ঋ      এ      ঐ      ও      ঔ।

এক থেকে একশত পর্যন্ত বানান।

  বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম এক থেকে একশত পর্যন্ত বানান। ১=  এক । ২=  দুই। ৩=  তিন। ৪=  চার। ৫=  পাঁচ। ৬=  ছয়। ৭=  সাত। ৮=  আট। ৯=  নয়। ১০= দশ। ১১= এগারো। ১২= বারো। ১৩= তেরো। ১৪ = চৌদ্দ। ১৫= পনেরো। ১৬= ষোল। ১৭= সতেরো। ১৮= আঠারো। ১৯= ঊনিশ। ২০=  বিশ। ২১= একুশ। ২২= বাইশ। ২৩= তেইশ। ২৪= চব্বিশ। ২৫= পঁচিশ। ২৬= ছাব্বিশ। ২৭= সাতাশ। ২৮= আটাশ। ২৯= ঊনত্রিশ। ৩০= ত্রিশ। ৩১= একত্রিশ। ৩২= বত্রিশ। ৩৩= তেত্রিশ। ৩৪= চৌত্রিশ। ৩৫= পঁয়ত্রিশ। ৩৬= ছত্রিশ। ৩৭= সাতত্রিশ। ৩৮= আটত্রিশ। ৩৯= ঊনচল্লিশ। ৪০= চল্লিশ। ৪১= একচল্লিশ। ৪২= বিয়াল্লিশ। ৪৩= তেতাল্লিশ। ৪৪= চুয়াল্লিশ। ৪৫= পঁয়তাল্লিশ। ৪৬= ছিচল্লিশ। ৪৭= সাতচল্লিশ। ৪৮= আটচল্লিশ। ৪৯= ঊনপঞ্চাশ। ৫০= পঞ্চাশ। ৫১= একান্ন। ৫২= বাহান্ন। ৫৩= তিপ্পান্ন। ৫৪= চুয়ান্ন। ৫৫= পঞ্চান্ন। ৫৬= ছাপ্পান্ন। ৫৭= সাতান্ন। ৫৮= আটান্ন। ৫৯= ঊনষাট। ৬০= ষাট। ৬১= একষট্টি। ৬২= বাষট্টি। ৬৩= তেষট্টি। ৬৪= চৌষট্টি। ৬৫= পঁয়ষট্টি। ৬৬= ছিষট্টি। ৬৭= সাতষট্টি। ৬৮= আটষট্টি। ৬৯= ঊনসত্তর। ৭০= সত্তর। ৭১= একাত্তর। ৭২= বাহাত্তর। ৭৩= তিয়াত্তর। ৭৪= চুয়াত্তর...